এখন রাত একটা ত্রিশ। কিছুক্ষণ আগে ক্লাস রিপ্রেজেন্টেটর ফেসবুক গ্রুফে জানিয়ে দিয়েছে, আগামীকাল একটাই ক্লাস। শহর হতে একটা ক্লাসের জন্য ক্যাম্পাসে যাওয়াটা তেমন গুরুত্ব সহকারে নিচ্ছি না। কারণ ২০ কি.মি. পথ পাড়ি দিয়ে, এই চৈত্র মাসের সৌর তাপ আর শাটলের শিক্ষার্থীদের সাথে ঘেঁষাঘেঁষি করে দুপুর দু'টার নাগাদ বাসায় ফেরা, কতটা যে বিরক্তিকর- তা লেখার মাধ্যমে ফুটিয়ে তোমাকে জানাতে পারছি না বলে, আমি দুঃখ প্রকাশ করছি।
আমি জানি, তুমি ভালোই আছো। তারপরও তোমার শরীরের প্রতি বিশেষ যত্ন নেওয়ার জন্য, বিশেষভাবে আমার অনুগ্রহ গ্রহণ করার অনুরোধ করছি। ইদানিং ইনসোমনিয়ার কারণে রাত জাগা অর্থাৎ দেরীতে ঘুমানোর একটা অভ্যাস হয়ে গেছে। মাঝেমধ্যে বিভিন্ন ওয়েবসাইট যেমন নেটফ্লিক্স হতে হলিউড অথবা সাউথ ইন্ডিয়ান কয়েকটা সিনেমা দেখা হয়। এখন সাপ্তাহে একটা কিংবা সর্বোচ্চ দুইটার চেয়ে বেশি সিনেমা দেখা হয় না। আগে তো মত্ত হয়ে পড়ে থাকতাম সিনেমা নিয়ে। তোমাকে এসব কি জন্য লিখেছি, আমি জানিনা, লিখতে ভালো লাগতেছে, মনে হচ্ছে তুমি-আমি দুজনে, এ চাঁদনী জ্যোৎস্নার রাতে বাড়ির ছাদের উপর; এ নির্জন গভীর রাতে, তোমার কোলে মাথা রেখে গল্প করেছি।
সাল অনুযায়ী, আমাদের সম্পর্কটা চার বছর চলতেছে। তোমার প্রতি যে আমার এক্সজ্যাক্ট কোন তারিখে যে, প্রথম দৃষ্টিগোচর হয়েছিল তা জানিনা বলে 'বর্ষপূর্তি দিবস' নামে কোন দিবস উদযাপন করতে পারতেছিনা। হয়তোবা আমার ডাইরী খাতা টা খুললে কিছুটা জানতে পারবো। আমার ব্যাক্তিগত ডায়েরী বলতে কোন কিছুই অস্তিত্ব ছিল না। যেদিন প্রথম তোমাকে আমার মতো করে দেখেছিলাম- হয়তো এর কয়েকদিন পরেই লাইব্রেরী হতে ডায়েরী টা কিনেছিলাম। এখনো আছে ডেস্কের এক কোণে, খুব যত্ন করে রেখে দিয়েছি, মাঝেমধ্যে মন খারাপ হলে ডাইরীখানা খুলে দেখি, আর আমি মৃদু কিছু লজ্জার হাসি দিই। ছেলে-মানুষে ছিলাম, আর তাছাড়া, লেখার হাত অতটা ভালো ছিল না বলে ভাষা(শব্দ চয়ন এবং ছন্দের ব্যবহার) গুলো খুবই উদ্ভট এবং অদ্ভূত ছিল। বেশ কতগুলো কবিতাও লিখেছিলাম। পড়বে একটা? খুব বেশি হেসো না কিন্তু..।
'ওগো নুমু,
এতদিন কোথায় ছিলে তুমি!
এতকাল পরে,
কালবৈশাখী ঝড়ের মতো হুট করে এসে,
কৃষ্ণচূড়া ফুলের মতন রাঙ্গিয়ে দিয়ে,
আমাকে কেন কবি বানালে?'
ভাবতেছ, এটা কোন কবিতা হলো! আচ্ছা, তাহলে চোখ বন্ধ করে, সেই চার বছর আগে তুমি ঠিক যেমনটি ছিলে, সেভাবে ভেবে দেখো তো.. হইতো কবিতাটা তোমার পছন্দ হয়েও যেতে পারে।
এখনো কবিতা লেখা হয়। তবে ছদ্মনামে, তোমাকে উদ্দেশ্য করে। অনেকেই কবিতাগুলো পড়ার পর ভালো মন্তব্যও করে। আচ্ছা, এরকম করলে কেমন হয়, 'একবার সব কবিতাগুলো সংকলন করে, কোন এক বইমেলায় তোমাকে উৎসর্গ করে প্রকাশ করলে।'
আইডিয়াটা ভালোই তো!
কবিতাগুলো তাহলে, এখন হতে সংকলন এবং সংযোজন করা শুরু করতে হবে। তোমাকে নিয়ে লেখার মাধ্যমেই যেহেতু আমার কবি গোষ্ঠীর মধ্যে আবির্ভাব, সেহেতু বইটি তোমাকে উৎসর্গ করে লেখব-
'প্রিয় নুমুকে,যার মাধ্যমে, আমার কলুষিত হৃদয়ের কাননে,প্রেমের পুষ্প প্রস্ফুটিত হয়েছে।'
আচ্ছা, আমার লেখা কবিতাগুলো, তাহলে কাব্যগ্রন্থটি হতে পড়ে নিও। শীঘ্রই আগামী কোনো এক বইমেলায় প্রকাশ করার চেষ্টা করব।
আচ্ছা তুমি কি এই চিঠিখানা পড়তে পড়তে বিরক্ত বোধ করতেছো? বিরক্তবোধ করাটাই স্বাভাবিক, লিখতে চাইছিলাম, ষষ্ঠ কিংবা সপ্তম শ্রেণীতে মুখস্থ করা,'বন্ধুকে শুভেচ্ছা জানিয়ে চিঠি' ধরনের এক-দুই পৃষ্ঠার চিঠি। কিন্তু, ইহা হয়ে গেল, আস্ত এক রচনা।
যাইহোক, আরও দীর্ঘায়িত করে তোমাকে বিরক্ত করতে চাচ্ছি না, যদিও অনেকগুলো কথা মনের মধ্যে দীর্ঘ প্রতীক্ষায় আছে, তোমাকে এক নিঃশ্বাসে বলে দেওয়ার জন্য। তুমি এ চিঠির জবাব যদি কোন একটা কিছু লিখে আমাকে পাঠাও তাহলে, তোমাকে আমি আমার আরেক চিঠিতে বাকি না বলা কথাগুলো বলার চেষ্টা করব।
আজ আর নই। ভালো থেকো সর্বদা, এটাই প্রার্থনা করি। তোমার জবাবের অপেক্ষায় রইলাম। আমার বিশ্বাস, তুমি অবশ্যই চিঠির উত্তর পাঠাবে, আমার না বলা কথাগুলো পড়ার জন্য।
রবী ঠাকুরের 'শেষের কবিতা'র মতো করেই শেষ করি,
"মোর লাগি করিয়ো না শোক,আমার রয়েছে কর্ম, আমার রয়েছে বিশ্বলোক।মোর পাত্র রিক্ত হয় নাই--,শূন্যরে করিব পূর্ণ, এই ব্রত বহিব সদাই।উৎকণ্ঠ আমার লাগি কেহ যদি প্রতীক্ষিয়া থাকেসেই ধন্য করিবে আমাকে।"
ইতি
তোমার শুভাকাঙ্ক্ষী,
হেনরী।

1 Comments
এক কথায় অনন্য, অসাধারণ। প্রথমে চিঠি মনে করেছিলাম পরে পড়তে পড়তে অনুধাবন করলাম এটি সাহিত্যের পর্যায়ে চলে গেছে।বর্ণনার ধরনটা খুব ভালো করে গোছানো।পরিশেষে অনুধাবন করি
ReplyDeleteআমার সেই ক্রাশকে যদি এই রকম একটা চিঠি পৌঁছাতে পারতাম, তাহলে আমাকে আজ সিংগেল থাকতে হতোনা। আপনার লিখা পড়ে অনুপ্রাণিত হলাম এবং কিছু ট্রিক্স পেলাম।