হুমায়ূন আহমেদের 'আজ রবিবার ' নাটকে শীলা আহমেদ, হুমায়ূন আহমেদ এর মেয়ে এবং অল্প কয়েকটা নাটকে অভিনয় করে দর্শকের মন জয় করে নিয়েছিল, এর একটা সংলাপে, সে তাঁর দাদাকে জিজ্ঞেস করে,'পৃথিবীর ওজন কত?' এতে বিজ্ঞ দাদা উত্তর দিতে না পেরে হকচকিয়ে যায়। তখন শীলা আরেকটা সংলাপে বলেন, সে এমন কঠিন কঠিন বেশ কয়েকটা প্রশ্ন/বিষয় মুখস্থ/শিখে রেখেছে, যাতে সে অন্যকে এসব প্রশ্ন করে হকচকিয়ে দিতে পারে অথবা সে যে অনেক কিছু সম্পর্কে জ্ঞান রাখে সেটা প্রমাণ করতে পারে।আমরা (বাংলাদেশিরা) হয়তো অন্যান্য দেশের মানুষের তুলনায় দৈনিক সময় একটু বেশিই পেয়ে থাকি, তা না হলে সোশাল মিডিয়া ব্যাবহারের দিকে হতে সারাবিশ্বে র্যাংকিং করতে পারতাম না dhakatribune। আমি প্রায়ই বলে থাকি, আমাদের হয়তো এক-বেলা খাবার না খেলে কোন সমস্যা হবে না, কিন্তু দৈনিক কয়েকবার সোশাল মিডিয়াই লগ ইন না-করি, সেটা হয়তো বিরাট কিছু হয়ে যাবে!
এখন মূল কথায় আসি। গ্রামের চাচাতো ভাই সম্প্রদায়ের মানুষ, you may understand what I mean, দের বেশ কয়েকটা করে ফেসবুক একাউন্ট আছে। সেখানকার অধিকাংশই 'ভাইরাল হওয়ার রোগে আক্রান্ত'। এ রোগের সংক্রামণ হতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও রেহাই পাননি। নৈতিকতা, মূল্যবোধ, আত্মসম্মান ইত্যাদি বিসর্জন দিয়ে নোংরা, পঁচা, অশ্লীলতা, এবং এ-সমজাতীয় বিষয়ের উপর লেখালেখি, কথাবার্তা কিংবা ভিডিও বার্তার মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার উদ্দেশ্যে প্রতিযোগিতায় পাল্লা দিচ্ছেন। যেটিকে বর্তমান সময়ের বহুল আলোকিত শব্দ 'রুচির দুর্ভিক্ষ' বলে আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে।
সাম্প্রতিক সময়ে লক্ষণের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, কিছু টিকটকার মার্কা মানুষ (দুঃখিত, আমি টিকটকার বলতে এক ধরনের গা/লিকে বুঝাই), স্পিকার এবং ক্যামেরা হাতে সাধারণত জনসমাগম এলাকায়(মেলা, ক্যাম্পাসে...) কোন ব্যাক্তিকে উদ্দেশ্য করে, হুট করে কিছু প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন এবং তা যদি, সঠিক উত্তর দিতে না পারে অথবা অপরাগত হয়, তা শেয়ার বাটনে ক্লিকের মাধ্যমে অট্টহাসিতে ফেটে পড়তেছি!
বিশ্ববিদ্যালয়ের সেমিস্টার ফাইনাল গুলোতে, ভাইভা বোর্ডে আমার অবস্থা ছিল করুণ। এমন সব বিষয়, যেগুলো গৃহশিক্ষক হিসেবে, স্টুডেন্টদেরকে বিভিন্ন উদাহরণের মাধ্যমে গড়গড় করে বুঝিয়েছি, প্রফেসরদের সামনে তা ভুল করে বসে ছিলাম কিংবা চুপ করে ছিলাম।
তাহলে মোদ্দা কথা এই যে, আমাদের অনেক জানা বিষয়ই, হয়তো slip of tongue বা অন্য কোন কারণে ভুল করে বসি কিংবা সঠিক জবাব দিতে পারি না। কিন্তু সেসব বিষয়কে আমরা হাসির পাত্রে পরিণত করতেছি।
Can you relate this point, please?
তাহলে, যারা সচেতন হিসেবে দাবি করেন/করি, তাঁদের উচিৎ হল ভাইরাল ইস্যুটিকে নিয়ে আলোচনা সমালোচনা না করা, তাহলে ভাইরাল ইস্যুটি আর ভাইরাল হওয়ার সুযোগ পাবে না।
মূল বিষয়টিকে যদি আমরা সারসংক্ষেপ করার চেষ্টা করি, ভাইরাল অশুভ এবং সমাজের জন্য অকল্যাণকর ইস্যুটি নিয়ে যদি আলোচনা সমালোচনা না করি, তাহলে ইস্যুটি আমাদের অন্যান্য মানুষদেরকে প্রভাবিত করতে পারবেনা, এবং ঐসব ইস্যুর উপর লেখালেখি, কথাবার্তা কিংবা ভিডিও বার্তা তৈরির প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে বা বন্ধ হয়ে যাবে।
সমাজ হতে অশুভ শক্তি দূর হোক।
আসুন সুবুদ্ধির চর্চা করি।
0 Comments