এখানে, যুক্তি কোথায়!

ডিপার্টমেন্টের এক প্রফেসর, তাঁর লেকচার এর মধ্যে উদাহরণ দিতে গিয়ে বলেছিলেন "No statement is completely wrong, if you provide your reasoning." যার বাংলা অর্থ এই দাঁড়াই যে,"কোন বিবৃতি সম্পূর্ণ ভাবে ভুল হতে পারে না, যদি আপনি উপযুক্ত যুক্তি দেখাতে পারেন।"
রবী ঠাকুরের ভাষায়,
"বিপুলা এ পৃথিবীর কতটুকু জানি।
দেশে দেশে কত-না নগর রাজধানী-
মানুষের কত কীর্তি, কত নদী গিরি সিন্ধু মরু,
কত-না অজানা জীব, কত-না অপরিচিত তরু
রয়ে গেল অগোচরে। বিশাল বিশ্বের আয়োজন;
মন মোর জুড়ে থাকে অতি ক্ষুদ্র তারি এক কোণ।
সেই ক্ষোভে পড়ি গ্রন্থ ভ্রমণবৃত্তান্ত আছে যাহে
অক্ষয় উৎসাহে-...
"

সময়ের পালাক্রমে উপলব্ধি করতে পারি যে, নিজের কিছু ভাল গুণাবলির মধ্যে 'জ্ঞান পিপাসু' শব্দটিও যোগ করা যায়, তাছাড়া, ইসলাম ধর্মে পবিত্র কুরআন শরীফে, নাযিলকৃত প্রথম আয়াত,
ٱقْرَأْ بِٱسْمِ رَبِّكَ ٱلَّذِى خَلَقَ
Read, ˹O Prophet,˺ in the Name of your Lord Who created—(Surah AL-ALAQ)

যার ভাবার্থ হল, If you want to learn something differently or deeply, then read.

সময় এবং পরিবেশভেদে, মানুষের মনঃস্তাত্ত্বিক চিন্তা-চেতনার পরিধির মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য এবং পরিবর্তন দেখা যায়।
পরিবার, সমাজ/পরিবেশ, বিদ্যাপীঠ, কিংবা নিজের উপলব্ধিকৃত শিক্ষা এবং বিশ্বাসকে হুট করে পরিবর্তন করে দেওয়া যায় না।
কোথায় যেন পড়েছিলাম, "আজকের দর্শন, আগামীদিনের সমাজ পরিবর্তন"
তাহলে সমাজকে অর্থাৎ মানুষের বিশ্বাসকে পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজন 'সময়'। একজন অপটিমিস্টিক(আশাবাদী) হিসেবে, এতটুকু বিশ্বাস করি যে, সমাজে একদিন পরিবর্তন আসবে। পজিটিভ অথবা নেগেটিভ(খারাপটি ভালো অথবা ভালোটি খারাপ হয়ে যাবে), কিন্তু পরিবর্তন যে আসবে, সেটা শতভাগ।
যেমন: ইংরেজরা ভারতবর্ষকে শাসন এবং শোষন করেছে, কিন্তু ১৯০ বছর পর হলেও, তাদেরকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে।
উপরের সব খন্ড খন্ড কথার সারমর্ম হলো- কোন বিষয়কে ভিন্ন বা গভীরভাবে জানতে হলে, আমাদেরকে STUDY করতে হবে। যতবেশি STUDY করব, ততবেশি CONFUSION সৃষ্টি অথবা গভীরতা বুঝতে পারব। আর, যতবেশি CONFUSION থাকবে, সেগুলোকে ANALYSIS করতে গিয়ে, নতুনত্বের আবিষ্কার করতে পারব, অর্থাৎ সঠিক তত্ত্বটি জানতে পারব কিংবা সৃষ্টি রহস্য উপলব্ধি করতে পারব।
চলুন একটা ডায়াগ্রাম এর সাহায্যে, বিষয়টিকে আরেকটু স্পষ্ট করি।
ডায়াগ্রাম

আমি বর্তমানে ২য় ধাপ এ অবস্থান করতেছি। অর্থাৎ স্টাডি করার চেষ্টা করতেছি। স্টাডি মেটেরিয়ালস্ হিসেবে বই, লাইব্রেরী, স্কলারস(এঁদের অনুসরণ করা, কথা বলা, আলোচনা সভায় যোগদান করা), স্মার্ট টেকনোলজি ইত্যাদি বিষয়বস্তুকে ব্যবহার করতেছি।
ফলাফলস্বরূপ, অনেক কনফিউশান দূর করতে পেরে, আত্ম-সন্তুষ্টি উপভোগ করি, আবার অন্যদিকে নতুন নতুন কনফিউশান উঠে আসতেছে। সুতারং পরবর্তী ধাপ হিসেবে, এনালাইসিস(বিশ্লেষণ) এর কাজে লেগে পড়ি। এবং তা,
বিভিন্ন জনের কাছে উক্ত, ধারণা/সৃষ্ট যুক্তি গুলো শেয়ার করি। বিভিন্নজন ভিন্ন ভিন্ন রকমের মতবাদ প্রকাশ করে থাকে। ওঁদের মধ্যে অনেকের কাছে কৃতজ্ঞতাবোধও প্রকাশ করি।
এদের মধ্যে অনেকে(সাধারণত ৩য় ধাপের মানুষেরা), আক্রমণাত্মক শব্দের মাধ্যমে জবাব দেওয়ার চেষ্টা করে। এবং এই সম্পূর্ণ লেখাটি মূলত তাঁদের উদ্দেশ্যে লেখা।
উদাহরণস্বরূপ: ধর্ম নিয়ে বিভিন্ন কনফিউশান শেয়ার করলে, অনেকেই সমাধানের উপায় রেফার করে(আমি এঁদের নিকট কৃতজ্ঞতা স্বীকার করতেছি), বিপরীত হিসেবে, বেশ কয়েকজনের কাছ হতে 'নাস্তিক এবং এ ধরনের' কয়েকটা উপাধিও পেয়েছি!
হ্যাঁ, অবশ্যই আমি এতে কষ্ট পাই। এটার কারণে না য, আমাকে নাস্তিক বলেছে, বরং ঐ সকল ব্যাক্তিদের জন্য।
কেননা, ওঁদের উচিত হল/ছিল, যদি আমি ভুল/অযৌক্তিক কিছু বলে থাকি, তাহলে, আমাকে যৌক্তিক আলোচনার মাধ্যমে সংশোধন করে দেওয়া, অন্যথায় চুপ করে থাকা।
ওঁরা সরাসরি বলে, 'You are WRONG', কিন্তু এর পেছনে ওঁরা কোন যুক্তি দেখাতে পারে না!
Haemin Sunim, একজন ইনফ্লুয়েঞ্চার, বলেছেন,
"It's okay for us to disagree.
But if we do, you should say that my opinion is different from yours,
not wrong.
There is a huge difference.
Try putting yourself in my shoes.
How would you feel if you were told wrong just for being different?"


"Each of us has our own unique perspective.
Seen from it, everyone seems to be right."


খেয়াল করেছি, কোন একটা বিষয় যখন ওদের কাছে শেয়ার করি, তখন অনেকেই বিষয়টিকে তর্ক হিসেবে নেয়, তখন তাঁদেরকে বিষয়টিকে আড্ডা হিসেবে নেওয়ার জন্য অনুরোধ করি। কেননা,
"Discussions are always better than arguments.
Because an argument is to find out who is right,
a discussion is to find what is right."
সুতারং, এখানে যাদের ভাষা কিংবা অভিব্যাক্তির মধ্যে আক্রমণাত্মক, অযৌক্তিক, অসুন্দর/অশালীন ইত্যাদি প্রকাশ পাই, তাঁদেরকে এটা সংশোধনের আহ্বান জানাচ্ছি।
প্রতিবাদের ভাষা হতে হবে অবশ্যই সুন্দর, স্পষ্ট, এবং যৌক্তিক।

বার্ট্রান্ড রাসেলের 'শিক্ষা ও সমাজকাঠামো' বই হতে উদ্বৃত্তি, 
"Tom Brown's Schooldays পুস্তকে পাই: একটি ছেলেকে প্রার্থনা করার জন্য লাথি মারা হলো। এই পুস্তকের প্রতিক্রিয়া ছিল গভীর। আমার সময়কালের একজনকে জানি, সে প্রার্থনা 'না' করার জন্য লাথি খেয়েছিল। আমি দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছি যে, ঐ লোক সারাজীবন নাস্তিক থেকে যান এবং নাস্তিক হিসেবে ব্যাপক প্রসিদ্ধি লাভ করেন। ফলে দেখা যাচ্ছে, গোষ্ঠীর খবরদারির অত্যন্ত ভালো দিক থাকলেও, খবরদারিটা বেশি হলে তা অবাঞ্ছনীয় হয়ে দাঁড়ায়।"

বিঃদ্রঃ কনফিউশান্ দূর করতে না পারা মানে হল: সাব-কনশাস মাইন্ড দ্বারা, এগুলোকে বিশ্বাস করা।
ধর্ম নিয়েও কনফিউশান্ বা বুঝতে না পারা‘টা অস্বাভাবিক নই। কোন বিষয়কে ভালোভাবে জানার আগ্রহ হতেই, মূলত কনফিউশানের উদ্ভব হয়।
Reactions

Post a Comment

0 Comments