Rat Race!

ছোটবেলা হতেই রেট রেসে পড়ে গেছি!
সবে মাত্র দশ পেরিয়ে এগারোতে পা দিয়েছিলাম, নিজেকেও ভালোভাবে বুঝে উঠতে পারিনি, পরীক্ষার প্রশ্ন বুঝা তো দূরের কথা! হাহাহা! তবুও প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায়(পিএসসি) কোনভাবেই দ্বিতীয় বিভাগে উত্তীর্ণ হয়েছিলাম।
সদ্য প্রতিষ্ঠিত হওয়া স্কুল, আমরাই দ্বিতীয় ব্যাচ ছিলাম। কখন কিভাবে যে ছয়টা বছর পার হয়ে গেল, সেটাও বুঝার সুযোগ হয়ে উঠেনি। পোকখালী কেজি স্কুল, যেখানে আমার হাতেখড়ি হয়েছিল, যেখানে পঞ্চম শ্রেণির চেয়ে বেশি না থাকায়, মাধ্যমিকের জন্য অন্য স্কুলে চলে যেতে হবে।
ক্লাসের ৯০% ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি হয়েছিল, কেজি স্কুলের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান পোকখালী হাইস্কুলে।
আব্বু তখন সমাজের উচ্চ শ্রেণিদের দলে, সদ্য নাম লেখাচ্ছিল।
আমার চালচলন আর বেশভূষণে যাতে সমাজের অন্যদের তুলনায় আলাদা করেই চেনা যায়, তার সব চেষ্টাঠুকু আব্বু করেই যাচ্ছিল।
তার মধ্যে একটি ছিল আমাকে গ্রাম হতে সরিয়ে ফেলা, অর্থাৎ এ ছোট্ট বাচ্চাটিকে হোস্টেলের মধ্যে রেখে আসা!
সুতরাং যে কথা সেই কাজ।
সব প্রসেসিং শেষে, ২০১১ সালের ১২ই ফেব্রুয়ারী বাড়ি হতে বেরিয়ে পড়েছিলাম, এবং নতুন এক ভিন্ন জীবনের সূচনা হয়েছিল।
কিশলয় স্কুল, যেখানে আমার শৈশব কেটেছিল এবং কৈশোরে পদার্পণ করেছিলাম, যেখানে গভীর রাতের অন্ধকারে বালিশের নিচে কান্নাকে চেপে ধরতাম, যেখানে বর্ষাকালের রাতে মেঘের বিকট আওয়াজে আচমকা ভয় পেয়ে আপন সিট ছেড়ে পাশের বন্ধুর সিটে গিয়ে গুটিসুটি মেরে ঘুমায় পড়তাম, যেখানে মোনাজাতের মধ্যে আব্বু-আম্মুর জন্য অভিশাপ খোঁজতাম সেটিই পরবর্তীতে (বর্তমানে) আমার এক মায়ার জগৎ হয়ে উঠেছে।
সময় তার নিজের মতো করে টিকটিক টিকটিক করে সেকেন্ডের চাকা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে, হঠাৎ জানিয়ে দিল, এখান হতেও তোকে পালাতে হবে!
ততদিনে নিজেকে বেশ মানিয়ে নিতে, ধীরে ধীরে নিজেকে এবং বাস্তবতাকে বুঝতে শিখতে শুরু করেছিলাম। এবং মাঝেমধ্যে আব্বু-আম্মুকেও অভিশাপের পরিবর্তে ধন্যবাদ দেওয়ার চেষ্টা করতাম. এখন যদিও ধন্যবাদ দিয়ে থাকি। যাইহোক, 
মাধ্যমিক শেষ হওয়ার পর গ্রাম হতে আরও দূরে চলে যাব এমন স্বপ্ন দেখা শুরু করা এবং সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে চট্টগ্রাম শহরে পাড়ি দেওয়া আর এখানে(চট্টগ্রাম) এসে আমার জীবনের মোড় ঘুরে গেল, যেটিকে টার্নিং পয়েন্ট বললে আরও ভালো বুঝতে পারবেন।
আর এভাবেই চলছে আমার জীবন। এ নিয়ে জীবনের অতি মূল্যবান তেরোটি বছর পার হতে চলতেছে।
তবুও এখনো স্বপ্ন দেখি, বিশ্ব দেখার! ঠিক কবি নজরুলের মতো করে,
"থাকব না'ক বদ্ধ ঘরে,
দেখব এবার জগৎটাকে।"

কয়েকদিন আগে আমার কাজিন, ছোট ভাই মেজবাহ অতি আদরের একজন, বাড়িতে আমার বিছানায় দুজনে ঘুমানোর চেষ্টা করতেছিলাম, সেই সময়, দুষ্টুমি করে ওকে বললাম 'তুই তোর বাড়িতে চলে যা, আমার সাথে কেন ঘুমাচ্ছছ?'
রিপ্লেঃ 'এটাতো আমার ঘর, আপনার বাড়ি তো চিটাগং।'

ঠিক পরক্ষণেই মনে পড়ল, আসলেই তো! আমি তো এখন এখানে বেড়াতে আসি, ছুটি কাটানোর জন্য, কয়েক মাস পর পর, দুই কিংবা তিনদিনের জন্য!
আর এখন সারাক্ষণই মাথায় ঘুরতে থাকে, 'আপন বাড়িতে অতিথি হয়ে বেড়াতে যাওয়া'। 
এখন কেউ এসে যখন 'চাকরি কিংবা পড়াশোনা'র জন্য ফ্যামেলি ছেড়ে চলে যাওয়ার কথা বলে, তাঁদেরকে স্বান্তনাসূচক  এ কথগুলোই শুনিয়ে দিই।

আর এভাবে ঠিক তখন হতে, গ্রাম হতে দূরে, আরও দূরে, অনেক দূরে চলে যাওয়ার স্বপ্ন দেখি, কিন্তু এর পেছনে, কোন একটা সুনির্দিষ্ট কারণকে দাঁড় করিয়ে দিতে পারতেছি না, ঠিক যেটিকে ইঁদুর দৌড় অর্থাৎ রেট রেস বলে আখ্যায়িত করা যায়!

পুনশ্চঃ আমাদের গ্রামটি তখন শিক্ষার দিক দিয়ে অনেকখানি পিছিয়ে ছিল। তবে কুসংস্কার, অন্ধ-ধর্ম বিশ্বাস, ধর্মীয় গোঁড়ামি, বাল্য বিবাহ ইত্যাদিতে অনেক পারদর্শী ছিল। যদিও এখন পরিবর্তনের পথে...

(10.08.23)
Reactions

Post a Comment

0 Comments