I Can't Swim!

'আমি আমার স্মৃতির মাঝেই সুখ খোঁজে বেড়ায়'
কেউ যখন জিজ্ঞেস করে, তখন নিজেকে 'গ্রামের ছেলে' বলে পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি।
গ্রামে বড় হয়েছি যদিও গ্রামেই বেড়ে ওঠার সুযোগ হয়ে ওঠেনি। পড়াশুনার অজুহাতেই নিজ গ্রামের বাইরে দিন কাটাচ্ছি

সাঁতার কাটা, ধান ক্ষেতে ঘুরাঘুরি, খালে-বিলে মাছ ধরা, কাদার মধ্যে ফুটবল খেলা, ডারউইনের বিবর্তনতত্ত্বকে* সত্য বলে প্রমাণ করার জন্য গাছে গাছে দৌড়াদৌড়ি, দিনের নিভু নিভু আলোতে লুকোচুরি খেলা, আর রাতের অন্ধকারে ভয় পাওয়া, গ্রামের ছেলে-মেয়ে সবার সাথে একটা পর্যায় পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের গ্রাম্য খেলাধূলায় লিপ্ত থাকা, জ্যোৎস্নার আলোতে আপু-আম্মু-চাচী-কাজিনরা ছোট-বড় সবাই মিলে দেশের জাতীয় খেলা হাডুডু আর কবুতর-বাদশা(গ্রাম্য নাম) খেলায় মেতে থাকা, কানামাছি খেলা, আর হেমন্তকালে ধান কাটার পর, উক্ত ধান মাড়াই করার জন্য গরু, পরবর্তীতে ট্রাক্টর এর পেছন পেছন দৌড়াদৌড়ি, তাছাড়া সদ্য মাড়াইকৃত ঘাসের উপর বসে বিভিন্ন রকমের রুপকথার গল্প বলা কিংবা শুনা ইত্যাদি সবকিছুরই সাথে ভালো কিছু স্মৃতি আছে।

ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তকে যেমন 'যুগসন্ধিক্ষণের কবি' বলা হয়, ঠিক তেমনি নিজেকে আমি 'যুগসন্ধিক্ষণের  মানুষ' হিসেবে স্টুডেন্টের কাছে বেশ কয়েকবার পেশ করেছি।

আগে বাড়িতে বাড়িতে পুকুর ছিল। যতটুকু মনে পড়ে,
 আমাদের ছোট্ট গ্রামটিতেও প্রায় ৬-৭টা..,না ৬টাই ছিল পুকুর।
এখন আছে শুধুমাত্র একটি!
আমাদের দেশে অন্যান্য দেশের তুলনায়, জন্মহার তুলনামূলক অনেকাংশেই বেশি। সুতরাং সেই রেঙ্কিং ধরে রাখার জন্য, আমাদের গ্রামও ম্যালথাসের তথ্যকে অনুসরণ করে, জ্যামিতিক হারে জনসংখ্যা হুড়হুড় করে বাড়িয়ে নিয়ে যেতে লাগল। ফলাফল স্বরুপ, খালবিল-পুকুর সবকিছুই প্রতিযোগিতায় পাল্লা দেওয়ার মতো করে বরাট করে চলতেছে। বলাই বাহুল্য যে, শীগ্রই আগামী কয়েক দশকের মধ্যে চাষযোগ্য জমি পাওয়া দুষ্কর হয়ে উঠবে, যদি জনপ্রবাহ এভাবে চলতে থাকে। অর্থাৎ বাল্যবিবাহ, অধিক সন্তান নেওয়ার চিন্তাভাবনা, অশিক্ষা, গোঁড়ামি, পরনির্ভরতা যতদিন না বন্ধ হয়।

আগে পুকুর গুলোই ছিল গোসল করা, কাপড় ধোয়া, চাল-তরকারি, হাঁড়ি-পাতিল পরিষ্কার করা, তাছাড়া
মাছ(মলা ঢেলা, টেংরা, কৈ, শিং) এর জন্য অন্যতম উৎস ছিল।
সারাদিন পুকুরের মধ্যে ঝাপটাঝাপটি করে, চোখ লাল হয়ে যেত, আম্মুর কাছ হতে প্রায়ই বকা শুনতাম, এ নিয়ে।
খুব অল্প বয়সে সাঁতার শিখে ফেলেছিলাম। এই বেলুনটির
S: Google

সহায়তায়, হয়তো আব্বু এনেছিল।

বেলুনটি গলার মধ্যে ভালোভাবে পড়ার পর, দু'পাশে দুটি লাল রঙের পাইপ ছিল, সেগুলোতে বাতাস দিয়ে ফুলিয়ে, পুকুরে ঝাপিয়ে পড়তাম, আর পানি আমাকে ভাসিয়ে রাখত।
জীবনানন্দের ভাষায় বলতে গেলে,

''সারা দিন কেটে যাবে(যেত) কলমির গন্ধ ভরা জলে ভেসে ভেসে"


পিকচারের বেলুনটির কথা আমি বেশ কয়েকবারই মনে করার চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু কোনভাবেই এটা কেউ নিয়ে ফেলেছিল নাকি কোথায় হারিয়ে গেছে কিছুই মনে করতে পারিনি। সে অনেক আগের কথা, আজ হতে প্রায়ই পনেরো-ষোলো বছর আগের! ভুলে যাওয়াটা অস্বাভাবিক না। তবে আজ এ বয়সে এসে যখন পাতা কুড়ানো শিশুদের মতো করে গুটিয়ে গুটিয়ে ফেলে আসা শৈশবকে মনে করার চেষ্টা করি, তখনই এক ভয়ার্ত আনন্দে বিহ্বল হয়ে পড়ি। অনেকেরই মনে হতে পারে, এমনকি আমারও নিজের কাছে মাঝেমধ্যে মনে হয়, এ তো ছোট্ট ছোট্ট বিষয় নিয়ে কেন আমি এত আবেগপ্রবণ হয়ে উঠি!
অথচ ঠিক এই মূহুর্তে এ ছোট্ট বেলুনটি, আমার কাছের আবেগের বড় একটা অংশ হয়ে উঠেছে এবং আমি এতেই আনন্দ পাচ্ছি!

কয়েকদিন আগে, 'Bermuda Island-2023' নামের একটা মুভি দেখতেছিলাম। মুভির মধ্যে প্লেনটি ক্রাশ হয়ে সমুদ্রে পড়ে গেলে, যাত্রীরা উক্ত বেলুনের সাহায্যে কূলে উঠে আসেন।
মুভির মধ্যে বেলুনের গায়ে লেখাটি ঝাপসা আকারে বুঝা যাচ্ছিল। সঙ্গে সঙ্গে গুগল করে বিস্তারিত জেনে নিলাম। Google..
সে সময় যদি রাফ্টটি যদি আমার না থাকত, মনে হয় না, ‍সাঁতার শিখতে অনেক দেরী লাগত। কেননা, ঐ সময়ে ছেলে-মেয়েদের পুকুরের মধ্যে ঝাপটাঝাপটি করাটাই ছিল, অন্যতম প্রধান খেলা। অথচ, এখনকার অনেকই হাটুঁ পানিতে নামতে ভয় পায়!! 
তখন ইচ্ছে করে, Hond-1953 সিনেমার মতো....



পুনশ্চঃ১> 'ডারউইনের বিবর্তনতত্ত্ব', সম্পর্কে আমার তেমন ধারণা নেই।

পুনশ্চঃ২> 'যুগসন্ধি ক্ষণের মানুষ' বলতে আমি যখন ছোট ছিল, অর্থাৎ সে সময়ে মোবাইল কিংবা ইন্টারনেটের ব্যাবহার অতটা ছিলনা বললেই চলে। যেখানে, আমাদের গ্রামে, সম্ভবত ২০০৭ সালের দিকে, আম্মুর কাছেই প্রথম একটা নোকিয়া বাটন ফোন ছিল। সে হিসেবে মোবাইল-ইন্টারনেট ছাড়া জগতের পরিবেশটাও পেয়ে ছিলাম, আর বর্তমান পরিবেশে তো দেখায় যায়, বাচ্চাদের কান্না থামানোর জন্য টিকটক চালু করেই দিলে হয়, সেই সাথে গেমিং! দু'টি জগতকেই যেহেতু অনুভব করতে পারতেছি, তাহলে তো বলাই যায় যে, যুগসন্ধি ক্ষণের মানুষ!
Reactions

Post a Comment

0 Comments