রামের সুমতি

রামের সুমতি
লেখকঃ শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
ধরণঃ গল্প
ব্যাক্তিগত রেটিং 5/5



'আমি আমার সুখের স্মৃতির মধ্যে বেঁচে থাকতে চাই'
বড় হওয়ার পর যখন ছোটবেলার কোন স্মৃতি মনে পড়ে, তখন মনে হয়, এর মতো তীব্র ব্যাথার সুখ পৃথিবীতে খুব কমই আছে। ঠিক আমি এই মুহুর্তে(লেখার সময়), সেটি হৃদয়ে গভীরতায় তরঙ্গের মতো অনুভব করতেছি!
২০১২ সালের শুরুর দিকে সম্ভবত, অর্থাৎ আমার বয়স যখন বারো এর এদিক-ওদিক, তখন আমাদের গ্রামের দুই-তৃতীয়াংশ মানুষের হাতে মোবাইলই ছিল না, ঠিক তখনই আমি আমার ল্যাপটপে বিভিন্ন ধরনের অফলাইন গ্যামিং করা, ফ্রন্ট ক্যামেরায় বিভিন্ন হাস্যকর ফিয়েচারর্স নিয়ে ভিডিও এডিটিং করা, আর সম্ভবত হার্ডডিস্কে একটা সিনেমা এবং কয়েকটা গান ছিল। আর আমি এসব নিয়ে মত্ত থাকতাম! সিনেমাটিকে আমরা 'ভাবী মা' সিনেমা বলেই চিনতাম।

প্রযুক্তির অনুন্নয়ন কিংবা ধর্মীয় অজুহাতের কারণে এলাকায় টিভি অতটা সহজলভ্য ছিল না। যদিও এই সময়ের অনেক আগে সাদা-কালো একটা টিভি ছিল। ঠিক সে কারণেই মনে হয়, আত্মীয়-স্বজন এবং পাড়া-পড়শী যাদের, বাড়িতে নিয়মিত যাওয়া-আসা ছিল, আমি নিশ্চিত ভাবে বলতে পারব, তাঁরা সবাই সিনেমাটি দেখেছেন অর্থাৎ তাঁদের সাথে বসে আমিও দেখেছি, এর মানে হল অনেকবারই সিনেমাটি আমার দেখা হয়েছে।
বিদ্রঃ ঐ সময়ে ল্যাপটপে কিভাবে সিনেমা ট্রান্সফার করতে হয়, জানা ছিল না বিধায় সিনেমা একটা ঐটাই ছিল।
এতক্ষণ যে সিনেমাটি নিয়ে বকবক করে যাচ্ছিলাম সেটি হল, ১৯৮২ সালের Mehul Kumar দ্বারা পরিচালিত, হিন্দি ভাষায় 'Anokha Bandhan'.
সবই বুঝলাম, তাহলে এতদিন পর কেন, এই স্মৃতিচারণ?
>সব জায়গায়, সব সময় বই নিয়ে বকবক করাটা এখন আমার অভ্যাসে পরিণত হয়ে যাচ্ছে! পরিবর্তন করা দরকার!?
সুতারাং, সেই হিসেবে স্টুডেন্টরাও এখন কোন বই কিনলে কিংবা পড়লে, সেটি নিয়ে আমার সাথে গল্প করার চেষ্টা করে।
শরৎ বাবুর 'রামের সুমতি' বইটি নাকি স্টুডেন্ট এক বসায় রাতের মধ্যে পড়ে ফেলেছিল, এবং বইটি সম্পর্কে রিভিউ দেওয়ার চেষ্টা করতেছিল। তখন আমি বললাম, 'সব বলে দিও না,বইটি আমাকে দাও, আমি পড়ে দেখি'।
নোটঃ কয়েক বছর আগে অনলাইনে সিনেমাটি খুঁজেছিলাম, কিন্তু কোন অভিনেতা কিংবা পরিচালকের কোন তথ্য দিতে পারি নাই বলে, খোঁজে পায়নি। আজকে পেয়েছি,(যেন আমার হারিয়ে যাওয়া মূল্যবান কিছু একটা খুঁজে পেয়েছি)।

’নারায়ণীর সাথে বৈমাত্রেয় বড় ভাই শ্যামলালের বিয়ের বছরই, শাশুড়ি তার আড়াই বছরের ছেলে রামকে পুত্রবধূর নারায়ণীর হাতে তুলে দিয়ে পরলোক গমন করেন।
নারায়নী তার দেবর রামকে নিজের ছেলের মতো করে, কোলে নিয়ে লালন করতে থাকেন। রামের বয়স এখন পনেরো-ষোল বছর, দুষ্টুমিও বেড়ে গেছে, পাড়ার লোকেরাও ভয় করতে শুরু করেন। নারায়ণীকে রাম মায়ের মতই ভালোভাসত, এবং ভয় করতো। এভাবেই চলছিল তাদের জীবন।
ঘটনাক্রমে, নারায়ণীর মা দিগম্বরিকে তাদের বাড়িতে আশ্রয় নিতে হলো। রাম-নারায়ণী'র মধ্যে এত ভালোবাসার সম্পর্ক সে মেনে নিতে পারতেছিল না।তাই বিভিন্ন চক্রান্ত করে তাঁদের মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটানোর চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকে।’

ছোট ছেলে-মেয়েরা, যে বয়সে সবার ভালোবাসায় সিক্ত থাকে, সবার কাছ হতে ভালোবাসাটাই প্রত্যাশা করে, দৈবক্রমে, ঠিক সেই বয়সে সিনেমাটি দেখার সৌভাগ্যটা, আমার হয়ে উঠেছিল! ঠিক সে কারণেই মনে হয় সিনেমাটি আমাকে খুব গভীরভাবে প্রভাবিত করে এবং আজকের প্রায় এগারো/বারো বছর পর, শরৎ বাবুর 'রামের সুমতি' বইটি আমাকে,আবার সেই ভালোবাসা ফিরে পাওয়ার জন্য আকুল করে তুলে।

নোটঃ সিনেমাটি 'রামের সুমতি' গল্পটি হতে একটু পরিবর্তন করে, ভালোভাবে ফুটে তোলা হয়েছে।

Reactions

Post a Comment

0 Comments