রমজানের ১৫ তাং, সেহরি শেষ করে বেলকনিতে বসে বসে আম্মুর সাথে মোবাইলে বেশ কতক্ষণ কথা বললাম। বাড়িতে কখন যাব, শপিং এর কি অবস্থা, কার জন্য কি কি কিনে নিয়ে যেথে হবে ইত্যাদি।
মোবাইলে কথা শেষ করতে না করতে, মেসেঞ্জারে এহসানের, আমার রুমমেইট, একটা মেসেজ।বাংলা নাটকের অসাধারণ একজন অভিনেতা, ফারুক আহমেদের, সক্রেটিসকে নিয়ে বলা একটা ক্লিপ। ভিডিওটা দেখার ক্লিক করার ন্যানো সেকেন্ডের মধ্যে রাস্তার দিক হতে এক বিকট শব্দ ভেসে আসল।
চোখ তুলে তাকাতেই মনে হল, গাড়ি এক্সিডেন্ট!
ততক্ষণে রুমের বেশ কয়েকজন বেলকনিতে এসে, আমরা সবাই ঐদিকে ঘটনা কি হয়েছে বুঝার চেষ্টা করতে লাগলাম।
ঠিক তখনই কানে হঠাৎ চিৎকার করে কান্নার আওয়াজ ভেসে আসল!
এহসান বলে উঠল, নিচে গিয়ে দেখে আসব কিনা, যদি কোন কাজে আসতে পারি।
আমি বললাম, চল তাহলে। মানিব্যাগে কয়েক হাজার টাকা নিয়ে নিলাম, যদি কোন প্রয়োজনে কাজে লাগাতে পারি, এই ভেবে।
দরজা খুলে দেখি, লিপ্ট নিচে নামতে শুরু করেছে, অর্থাৎ নিচ হতে ৭ম তলায় আসা আবার নিচে নামা, অনেক্ষণ লেগে যাবে।
তড়িঘড়ি করে, সিঁড়ি বেয়ে নেমে, যতদূর সম্ভব দৌড়ে গিয়ে দেখি ফ্লাইওভারের গোড়ায় একটা ট্রাক এক্সিডেন্ট! সামনের দিকে মারাত্মক ভাবেই ট্রাকটি ভেঙ্গে গেছে, চাকা দু'টাই খুলে অন্যত্র চলে গেছে।
মানুষের ভীড়ও খুব দ্রুত বেড়ে গেছে।
যে যেভাবে পারে সাহায্যে করার জন্য তাড়াহুড়ো ভঙ্গিতে দৌড়াদৌড়ি করতেছে।
ভেতরে ড্রাইভার বেঁচে আছে কিনা বুঝায় যাচ্ছে না, তবে লোকজন কাউকে যেন বের করে নেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছিল।
মাথায় সঙ্গে সঙ্গে 'ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স' কথা মাথায় আসল। আশেপাশের এলাকায় ফায়ার সার্ভিসের কন্টাক্ট নাম্বার মোবাইলে সেইভ করা নেই।
এহসানকে বললাম, তুমি দ্রুত ফায়ার সার্ভিসের নাম্বার ম্যানেজ করে কল দাও, আমি ৯৯৯ এ কল দিয়ে কিছু করা যায় কিনা দেখি।
সময় ব্যয় না করে, ৯৯৯ এ কল দিলাম:
~ওপাশ হতে অফিসার নিজের নাম বলে, স্যার আপনাকে কিভাবে সাহায্য করতে পারি?
-চট্টগ্রাম, বেবি সুপার মার্কেট, কসমোপলিটান, ২নং গেইট এলাকায়, ফ্লাইওভারের সাথে ধাক্কা খেয়ে একটা গাড়ি এক্সিডেন্ট হয়েছে।
~ এলাকাটা কোন থানার, আন্ডারে?
- পাশের এক ভদ্রলোকের কাছ হতে থানা শিউর করে নিয়ে, পাচঁলাইশ থানা বললাম। বেশ কয়েকবার থানার নামটি বলার পরও, অফিসার বুঝে উঠতে পারেননি। তখন বাংলা বানান করে বুঝিয়ে বললাম।
~ আপনি একটু লাইনে থাকেন, ঐ থানার একজনের সাথে আপনাকে যোগাযোগ করিয়ে দিচ্ছি।
৩০-৪০ সেকেন্ড পর, থানার অফিসার বিস্তারিত জিজ্ঞেস করল, এবং জিজ্ঞেস করল, পুলিশ পাঠালে হবে কিনা?
- আমি বললাম, সম্ভবত ড্রাইভার মারাও গেছে বুঝে উঠতে পারতেছি না, মানুষের ভীড় বেশি। গাঠিটা মারাত্মক ভাবেই ভেঙে গেছে, ড্রাইভারকে বের করে নিয়ে আসা যাচ্ছে না। ফায়ার সার্ভিস লাগবে অবশ্যই।
~ আমার নাম জিজ্ঞেস করে, ধন্যবাদ জানিয়ে বলল, আমরা শীগ্রই আসতেছি।
মোবাইল কেটে দিয়ে ঘটনার একদম কাছে গিয়ে জানতে পারি, ড্রাইভার নাকি পালিয়ে গেছে! এবং অ্যাসিস্ট্যান্টে পা আটকা পড়ে গেছে, এবং সুস্থই আছে, আলহামদুলিল্লাহ।
আশেপাশের মানুষরা প্রাণপণে চেষ্টা করেই যাচ্ছিল, মানুষটাকে উদ্ধার করার জন্য। প্রচন্ড কান্না করতেছিল, পা'র দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে।
আমি বারবার রাস্তার দিকে তাকিয়ে আছি, পুলিশ কিংবা ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি দেখা যায় কিনা।
কল দেওয়ার দশ মিনিটেরও কম সময়ের মধ্যে ওরা হাজির।
সস্থির নিশ্বাস ফেলে, যতটুকু সম্ভব ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের জন্য, ভীড় করে থাকা মানুষদেরকে জায়গা করে দিতে বললাম।
তারপর অল্প কয়েক মিনিটে মধ্যে বিভিন্ন মেশিনারি ব্যাবহার করে পায়ের মধ্যে কোন ক্ষতি না হওয়ার মতো করে বের করে নিয়ে এসে গাড়িতে করে চট্টগ্রাম মেডিকেলে নিয়ে গেল।
এরপর পুলিশ ধীরে সুস্থে মানুষদেরকে সরে যেথে বলল।
আমরাও আলহামদুলিল্লাহ বলে, বাসায় এসে শুয়ে পড়লাম।
এর কয়েক মিনিট পর, ৯৯৯ হতে আমাকে কল দিল, এবং 'ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স' এবং পুলিশের উপস্থিতি ছিল কিনা জিজ্ঞেস করল।
আমিও ৯৯৯ কে অতি দ্রুত সাড়া দেওয়ার জন্য, যথোপযুক্ত ধন্যবাদ জানিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।
পুনশ্চঃ ০১> একটা সময় ভাবতাম ৯৯৯ এ একবার কল দিয়ে দেখব, ওরা আসলেই রেসপন্স করে কিনা সেটা যাচাই করার জন্য!
কারণ বেশিরভাগই সময় জনগণের মুখে ওদেরকে নিয়ে 'আস্থাহীনতার' কথাই শুনে এসেছিলাম।
পুনশ্চঃ ০২> আমি এ পর্যন্ত ৩বার, বিশেষ প্রয়োজনে পুলিশের সাথে কথা বলেছি, প্রত্যেকবারই ওরা আমাকে, আন্তরিকতার সাথে সততার পরিচয় দিয়েছে।
পুনশ্চঃ ০৩> 'ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স' জীবনের বাজি রেখে, অন্যান্যদের উদ্ধার করেছে কিংবা সাহায্য করেছে এমন অনেক শুনেছি, এবং এবারই প্রথম দেখলাম।
পুনশ্চঃ ০৪> আমার দেখা প্রথম গাড়ি দুর্ঘটনা ছিল এটি।
0 Comments