আজ সম্পূর্ণ দিনটা কিছু সুন্দর মুহুর্তের মধ্য দিয়েই কেটে গেল!
বিশ্ববিদ্যালয় ২৩.১২.২২ হতে কয়েকদিনের জন্য শীতকালীন বন্ধ। আজ ২২ তাং ডিপার্টমেন্টে একটা র্যাগ ডে ছিল। সাধারণত কোন ক্লাস না থাকায় প্যারা না নিয়ে, ধীরে সুস্থে ঘুম হতে উঠব ভাবছিলাম।
ফ্রেন্ডরা বলল, ৯টা ৪৫ এর ট্রেনে যাবে। সুতারাং এলার্ম দিতে হল। সকাল ৯টার দিকে ঘুম হতে উঠে, ফ্রেশ হয়ে ব্যাগ গুছানোর আগে, হোয়াটসঅ্যাপ এবং ফেসবুক চেক করি, যাতে কেউ কোন গুরুত্বপূর্ণ মেসেজ দিছে কিনা জানার জন্য।
ফেসবুকে ক্লিক করতেই, একটা পোস্ট, ''Allhamdulillah.finally,I safely reached in the United state of America.hoping prayer.''
মনটা ঈর্ষান্বিত ভাবে ভাল হয়ে গেল, গ্রামের এক ছোট ভাই, আমেরিকা যাব যাব বলে, চলেই গেছে!
শাটল মিস করার ভয়ে, তাড়াহুড়ো করে রেডি হয়ে ষোলশহর চলে গেলাম। ট্রেন ছেড়ে দিয়েছে, ফ্রেন্ডের সাথে আড্ডা দিয়ে দিয়ে যাচ্ছিলাম। পাশে কিছু স্টুডেন্ট নানান গানের খন্ড খন্ড অংশের মধ্য দিয়ে, গিটারে তাল তুলার ব্যর্থ চেষ্টা করতেছিল।
শাটলের সামনের সিট গুলোর দিকে, আমার চোখ পড়তেই, চোখ যেন আটকে গেল!
যদিও আমরা এখন তৃতীয় বর্ষের শেষের দিকে, তারপরও মেয়েটাকে দেখে মনে হল, আমাদের সিনিয়র কেউ। হয়তো ভাইবা, না ভাইবা হতে পারে না, তাহলে কোন অনুষ্ঠান কিংবা ফাংশনে উপস্থিত হওয়ার জন্যই এতো সুন্দর ভাবে নিজেকে সাজিয়ে নিয়েছে। সাধারণত ফাল্গুনীর প্রথম তারিখে রমণীদের এভাবে সাজতে দেখা যায়।
ঠোঁটে হালকা খয়েরি রঙের লিপস্টিক আর ঠোঁটের সর্বোচ্চ দু’আঙ্গুল নিচে একটা কালো টিপ, হলুদ রঙের শাড়ির সাথে গুছানো লম্বা খোলা চুল গুলো, বুকের সামনে ছড়িয়ে দিয়ে কানে হেডফোন লাগিয়ে আনমনে জানালার দিকে তাকিয়ে মুগ্ধ হয়ে কি যেন দেখতেছিল!
আমি তখন বশীভূত হয়ে, অপলক দৃষ্টিতে রমণীর দিকে তাকিয়ে, কবিতা রচনা করিতে ব্যাস্থ। আমার ভাবনায়, কি সুন্দর সুন্দর পঙক্তি আসতেছিল, অন্যদিন যেসকল পঙক্তিগুলোকে অনবদ্য বলে স্বীকার করতাম, অথচ আজ যেন, সে-সব পঙক্তি গুলো তুলনামূলকভাবে গুরুত্বহীন হয়ে উঠতেছে! নতুন নতুন শব্দ চয়নের মধ্য দিয়ে বেশ কতগুলো পঙক্তিও তৈরি করতেছিলাম... ঠিক তখনই ফ্রেন্ডের হাতের ধাক্কা চেতনায় ফিরে আসলাম।
পাশে বসে যে চাকমা স্টুডেন্টটি তার বেসুরে গলার মধ্য দিয়ে, গিটারে তাল তুলার ব্যার্থ চেষ্টা করিতেছিল, হঠাৎ তাকে যেন আমার,'বিশ্বের সর্বকালের সর্বসেরা গায়ক হিসেবে উপাধি দিতে ইচ্ছে হল'। মনে হচ্ছে তার গলা অতি অসম্ভব সুন্দর, এবং লিরিক্স গুলো যেন ঠিক এই মুহুর্তে, আমাকে অনুপ্রেরণার দেওয়ার জন্যই রমণীটিকে উদ্দেশ্যে করেই গাওয়া হচ্ছে! তাঁর গানের প্রতিটা লিরিক্সই যেন আমার হৃদয় মন্দিরে ক্রমান্বয়ে আঘাত করেতেছিল, ঠিক যেটিকে, রবী ঠাকুর 'সুখের মতো ব্যাথা' বলে আখ্যায়িত করেছিলেন।
এ অসহ্য সুখে দগ্ধ হতে হতে হঠাৎ খেয়াল হল; স্টুডেন্টরা ব্যাগ হাতে সিট হতে উঠে দাঁড়াচ্ছে। বাইরে তাকিয়ে দেখি, শাটল ক্যাম্পাসে পৌঁছে গেছে।
আজকে এত তাড়াতাড়ি কেমনে পৌঁছে গেলাম!
ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি, না, ঠিকই নিয়মানুসারে দীর্ঘ ৪৫ মিনিট সময় নিল, অথচ মনে হলো, পরীক্ষার হলের মতো, কয়েক মিনিটের মধ্যে সময়টা শেষ হয়ে গেল! আজকে কি শাটল অন্যদিনের মতো মাঝপথে দাঁড়িয়ে কিছু সময় বের করে দিতে পারত না।
শাটল হতে নেমে যাওয়ার জন্য স্টুডেন্টদের তাড়াহুড়োর কারণে আর রমণীর দিকে ফিরে তাকানোর সুযোগই পেলাম না।
আমি আমার পথে, রমণী রমণীর পথ ধরে চলে গেল। হারিয়েই গেল, বলা চলে। স্টেশন পার হতে হতে জিরাফের মতো গলা উঁচিয়ে এদিক-ওদিক অনেক্ষণ খোঁজেই দেখেছিলাম।
অথচ,মন না চাইলেও, এখানেই আমার আর রমণীর গল্পের ইতি টানতে হলো।
শাটলের এ দীর্ঘ জার্নিতে ঠিক এ ভাবে অনেকেই আসে, এবং ছোট গল্পের ন্যায় গল্পটি অসম্পূর্ণ রেখে হারিয়ে যাই (শেষ হয়েও হইল না শেষ)।
ভালো থেকো।।
⇨শাটল বৃত্তান্ত।
0 Comments