বৃষ্টির সাথে বাঁশখালী (Banshkhali)

ক্যাম্পাস হতে এসে, ক্লান্তি ভাব কাটতে না কাটতে রওনা দিলাম টিউশনিতে।

এরপর কিছু ছোট ভাই দেখা করতে আসছিলো, অনলাইনে কিছু বই অর্ডার দিয়েছিলাম সেগুলো নিয়ে। এরপর রাত প্রায় দশটার দিকে বাসায় পৌঁছানোর পর ফ্রেশ হয়ে বসতে না বসতে, মিসকাতের একটা মেসেজ।
' ব্রু, কি অবস্থা? '
ভালো, তুর?
'ঘুরতে যাবি?'
যাওয়া যায়। কোথায়? কে কে যাচ্ছে?
'বাঁশখালী। জ্যাকি, এনায়েত, সাইফুল, মেজবাহ, রুহুল আমিন, জোবায়ের, মনির, আমি(মিশকাত)'।
অসুস্থ ছিলাম, গায়ে জ্বর সাথে কোমরের মেরুদণ্ডের দিকে প্রচুর ব্যাথা করতেছিল, তাই কিছুই ভালো লাগতেছে না, তাছাড়া আর্থিক কিছু সমস্যাও ছিল, তারপরও অনিচ্ছা শর্তেও হ্যা বলে দিলাম।
শনিবার(২৩.০৭.২২) দিন ফিক্সড করা হল, অর্থাৎ আরো চার দিন বাকি।
এ কয়দিনের মধ্যে, শনিবার এর মাঝখানে বাঁশখালী ট্যুর নিয়ে আর কেউ কোন কথা বলে নাই, ভেবেছিলাম হয়তো ট্যুর এটা নিয়ে এত সিরিয়াস না কেউ। যদিও আমি বাঁশখালী কোন দিকে তা বেশ কয়েকজনের কাছে জিজ্ঞেস করে, ঘুরার(দেখার) মত কি কি আছে হালকা ধারণা নিয়ে নিলাম। ততদিনে আমার অসুস্থটাও ভালোর দিকে আসছে।
শনিবার রাতে হোয়াটসঅ্যাপ একটা মেসেজ, ট্যুর নামে একটা গ্রুফ খোলা হয়েছে, মিশকাত এগুলোতে বেশ পারদর্শী। ডিপার্টমেন্টে কোন একটা কিছু হলেই মিশকাত সাথে সাথে ঐ নামে গ্রুফ খোলে ফেলবে। অবশ্যই ভালো গুণ।
মিশকাত, সাইফুল, জোবায়ের মিলে বেশ কিছু পরিকল্পনা করে একটা ব্রিফিং করার চেষ্টা করতেছিল, আগামীকাল অর্থাৎ ট্যুরের দিন কি কি করব, কিংবা গাড়িতে করে কেথায় নামব, কিংবা প্রথমে কোন স্পটে যাব, আবার ওখান হতে কয়টার দিকে ব্যাক করে আরেক স্পটের দিকে কোন সময়ে কোন গাড়িতে যাব ইত্যাদি ইত্যাদি। সাথে জন প্রতি কত করে সর্বোচ্চ কত করে খরচ হতে পারে সে নির্দেশনাও দিয়ে দিল।
গ্রুফে তখনও পর্যন্ত তেমন রেসপন্স করিনি, কারণ আমি সিরিয়াস ছিলাম না যাওয়াটা নিয়ে, স্পেশাল কোন কাপড় ছিল না ট্যুর উপলক্ষে সেটাও একটা কারণ।
যাইহোক সকালে ঘুম হতে ওঠে দেখা যাবে। এ বলে, পরদিন সকালের জন্য বেশ কয়েকটা এলার্ম সেট করে ঘুমাতে গেলাম।
সাধারণত ক্যাম্পাসে তেমন যাওয়া হয় না, ক্লাস টেস্ট, জরুরী কোন কাজ কিংবা একটার চেয়ে বেশি ক্লাস থাকলে, তবেই যাওয়া হয় ক্যাম্পসে। স্কুল জীবন হতেই রাতে পড়ার একটা অভ্যাস হয়ে গেছে, যেটা এখন আরো গাঢ় রুপ ধারণ করেছে। টেবিল ল্যাম্প জ্বালিয়ে নন-একাডেমিক বই বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পড়া হয়, একেবারে ফজরের নামাজের পর ঘুম, যদি সকালে কোন কাজ না থাকে। বিশেষ কোন কাজ থাকলে, বিছানায় শুয়ে শুয়ে PDF পড়ার চেষ্টা করি সেক্ষেত্রে ঘুম চলে আসে তাড়াতাড়ি।
যাইহোক, কেন জানি এবার ঘুম আসতে চাচ্ছেও না। কোন সময় ঘুমায় গেছি সেটা খেয়াল ছিল না, সকালে এলার্মের মাধ্যমে ঘুম ভাঙ্গল।
কথা ছিল ৮.০০ টার আগেই বহদ্দারহাট চাঁদগাঁও থানার সামনে সবাইকে উপস্থিত থাকতে হবে।
ঘুম হতে ওঠে দেখি, বাইরে গুটি গুটি বৃষ্টি পড়তেছিল। বাইরের পরিবেশে রোমাঞ্চকর মনে হল। ঠিক করে নিলাম, বাঁশখালী ট্যুর হয়তো মন্দ হবে না, তাছাড়া এখন না গেলে আর কখনো যাওয়াই বা হবে কিনা সন্দেহ।
হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুফের মেসেজ গুলো আবার চোখ বুলিয়ে নিলাম, সব ঠিকঠাক আছে কিনা, দেখলাম জোবায়ের, একজন বাদ পড়ে গেছে, তাঁর নাকি যাওয়া হবে না। বাকি আট জন।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, প্রথমে চা-বাগান, তারপর ইকোপার্ক, এরপর সি-বিচ।
ব্যাস, আর চিন্তা না করে ব্যাগ ঘুচাতে শুরু করলাম। ঘুরার স্পট যেহেতু তিনটা, সেহেতু কাপড়ও তিনটা নিতে হবে, কারণ এক পোশাক পড়ে তো আর এত্তগুলা ছবি তুলা যাবেনা।
দু'টা শার্ট, একটা টি-শার্ট আর একটা বিচে নামার জন্য থ্রি-কোয়ার্টার প্যান্ট। সান গ্লাস টিস্যু একটু মুছে নিয়ে চোখে লাগিয়ে দেখলাম, ভালেই অনুভব হচ্ছে। তাছাড়া আমাদের সচেতন ব্যাক্তি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুফে রিমাইন্ড করে দিয়েছিল, যারা যারা সাথে ব্যাকপ্যাক নিবে তাঁরা যেন, ছাতাও নেয়, কারণ বৃষ্টির দিন। বৃষ্টির অবস্থা দেখে ছোট্ট একটা পলিথিনও নিয়ে নিলাম, যাতে, যদিও ভিজতেও হয়, তাহলে যেন মোবাইল গুলো নিরাপদ থাকে।

তাড়াহুড়ো করে ফ্রেশ হয়ে, নিচের এই ছবিটি

দিয়ে বললাম, Hanif is on the way..

সময় তখন ৭টা ৩০ এর মত। রেস্টুরেন্টে ঢুকলাম নাস্তা করার জন্য, সেই চিরাচরিত নাস্তা, যেটা ভার্সিটিতে প্রতিদিন খেতে খেতে ও বিরক্ত হচ্ছিনা, ডিমের ‍সাথে পরাটা।
নাস্তা করার পর ঠিক ৭টা ৫০ এ বহদ্দারহাট পোঁছে কল দিলাম, দেখি কারোও খবর নেই, আসতেছি এবং বের হচ্ছি এই হল অবস্থা।
চলে গেলাম, রুহুল আমিনের বাসায়, হেঁটে ৫ মিনিট মতো লাগল। সেখানে মধু ভাত (গ্রামে সম্ভবত খেয়েছিলাম ৫/৬ বছর আগে), তাদেরকে নাকি পাশের বাসার আন্টি দিয়েছিল। আমাদের পাশেও এরকম আন্টি থাকলে খারাপ হতো না।
রিজিকে থাকলে যা হয় আরকি, প্লেটে কয়েক চামচ নিয়ে খাওয়ার সময় রুহুল জিজ্ঞেস করল,'মধু ভাত কেমনে হয়ছে(খেতে কেমন লাগতেছে)?'
আমি বললামঃ কখন শেষবার খেয়েছিলাম ভুলে গেছি, সেজন্য আসল স্বাদটা কিরকম মনে করতে পারতেছি না বলে, এটাকে রেটিং করতে পারতেছি না। দুঃখের বিষয় কিন্তু, গ্রামে একসময় এ খাবারগুলো ঐতিহ্যের মতো ছিল, এখন দেখাও যায় না, মানুষ ভুলে যেতে চলছে।

জ্যাকি আর এনায়েত অন্য আরেক কাউন্টারে চলে গেছে, সাইফুল আর মিশকাত নতুন ব্রিজে যাওয়ার প্লান করতেছে, আমি আর রুহুল বহদ্দারহাট কাউন্টারে ঘুরতেছি। প্লান অনুযায়ী, তাদেরকে বহদ্দারহাট কল দিয়ে নিয়ে আসার পর কাউন্টারের জৈনক ব্যাক্তি আমাদেরকে নতুন ব্রিজে চলে যাওয়ার পরামর্শ দিলেন যে, ওখান হতে কম দামে মোটামুটি ভালো গাড়ি পাওয়া যাবে।
যে কথা সেই কাজ, আমরাও রওনা দিলাম। খেয়াল করলাম, জোবায়ের ছাড়াও বেশ কয়েকজনকে মিসিং মনে হচ্ছে। মেজবাহ, কোচিং ব্যাবসায়, এর কারণে সকাল বারটার পূর্বে আমাদের সাথে যোগ হতে পারবে না, পরবর্তীতে একা গিয়ে আমাদের সাথে যোগ হবে। মনির নাকি কল রিসিভ করতেছে না, বেশ কয়েকবার ডায়াল করার পরও।
যাইহোক, ট্যুরের মধ্যে সবাই নিয়মিত হলে, সেটাকে ট্যুর বলা যাবে না, তখন বাহিনীর কোন মিঠিং বলতে হবে। কেউ দেরী করে আসবে, কিংবা কেউ কেউ আসতে পারবে না এটা স্বাভাবিক।
যাইহোক ছোট্ট একটা জ্যাম পার করার পর নতুন ব্রিজ এসে বাসের পিছনের দিকে ছয়জনই ওঠে পড়লাম।

ততক্ষণে ৯টা বেজে গেছে। আমি সময়টা ঠিক ভাবে বলতে পারতেছি কারণ, এন্ড্রয়েডে একটা সুবিধা ছবির ডিটেইলস এ সময়টাও উল্লেখ থাকে, আর আমরা তো ছবি তুলা ছাড়া কোথাও পা ফেলতেছি না।

শুরুতেই বরাবরের মতো কর্ণফুলির লাঞ্চগুলো দেখার জন্য পর্দা সরিয়ে এদিক-ওদিক তাকাতে লাগলাম।

নতুন ব্রিজ পার হয়ে বেশ কতটুকু যাওয়ার পর জায়গাগুলোকে আর পরিচিতি মনে হচ্ছে না। এনায়েত বলে উঠল এটা জ্যাকির এলাকা, আনোয়ারা। খেয়াল করে দেখলাম রাস্তার বেহাল দশা। আমি জ্যাকিকে ডাক দিয়ে বললাম, এই তুদের সাংসদ কে? রাস্তার এ অবস্থা গুলো দেখে না? সাথে সাথে পাশ হতে সাইফুল, রাস্তার এক পোস্টারে সাংসদের ছবি দেখিয়ে দিলেন (রাস্তাগুলো নির্মাণাধীন ছিল)।
একটা বাজার পেড়িয়ে, সামনে আর একটু যেতে না যেতেই সাঙ্গু নদীর সাথে পরিচয় করিয়ে দিল রুহুল,প্রায় সাথে সাথে পেছন হতে জ্যাকি বলল, 'নদীর এখান হতে ভাসাইন্না(ভেসে যাওয়া) দিলে, সোজা আমার বাড়িতে পৌঁছে যাবি।'
আর হ্যাঁ, বলে রাখা ভালো যে, এখানে আমরা সবাই দক্ষিণ চট্টগ্রাম এলাকার।
তাই, এখানে অনেক ভোয়াইঙ্গা (অন্য বিভাগের মানুষদেরকে চট্টগ্রামের মানুষেরা আপ্যায়ন করে থাকে এ নামে) দের নিয়ে অনেক আলোচনা, সমালোচনা ও পর্যালোচনা হয়েছে(রসিক অর্থে)।
এরপর আরেকটু এগুতে না এগুতে রুহুল আমাকে রাস্তার ডান পাশে ইঙ্গিত করে কিছু নির্মাণ কাজ দেখিয়ে বল, এটা হল কর্ণফুলি টানেল (যেটা বাংলাদেশ তথা, দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম টানেল হতে চলতেছে), ততক্ষণে গাড়ি অনেকদূর চলে এসেছে, তারপরও জানালার পাশ ঠেলে আর একটু দেখার চেষ্টা করলাম। ৩.৪৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এক সুড়ঙ্গপথ, তাও আবার কর্ণফুলির মতো করস্রোত নদীতে ভাবতেই গা'য়ে শিহরণ দিয়ে ওঠে।
যাইহোক, 'নানা মুনির নানা মত' এ প্রবাদ অনুসরণ করে, কোন একটা নতুন টপিক্স এলেই সেটা নিয়ে আড্ডা দিতে দিতে প্রায় ঘন্টা দেড়েক পর 'চাঁনপুর বাজার' নামক স্থানে নেমে এক ছোট্ট রেস্টুরেন্টে বসলাম কিছু নাস্তা করার জন্য। সাইফুলসহ বেশ কয়েকজন সকালের নাস্তা না করেই এতটুকু রওনা।
সম্পূর্ণ এক গ্রামের রেস্টুরেন্ট হওয়ায় (তেমন সৌখিন খাবার কিছু পাওয়া যায় না) বেশ কয়েকজনের জন্য চনা (অনেকে ছোলা বলে থাকে), আর সাথে সিঙ্গারা-পেঁয়াজু অর্ডার দিলাম।
পেঁয়াজুটা মোটামুটি খেতে ভালোই লাগতেছে (হালকা গরম, মনে হচ্ছিল কিছুক্ষণ আগেই নামানো হয়েছে), সিঙ্গারা খায় না আমি (বেশ কয়েক বছর ধরে)।
অন্যরা যখন চনা খাচ্ছিল, দেখতে খুব সুস্বাদু লাগতেছিল (তেলের কারণে চকচক করা), সাইফুলকে জিজ্ঞেস করলাম চনা কেমন হয়ছে? রিপ্লে ছিল, 'অতটা ভালো নয়'।
আমি লোভ সামলাতে না পেরে ডাক দিয়ে বললাম, এই মামা, আরেক প্লেট চনা দিয়েন তো..।
নিয়ে আসার পর, এক চামচ মুখে দিতে না দিতেই, মুখ বন্ধ করে নিলাম, কি খাচ্ছিলাম, বুঝতে পারতেছিলাম না, সম্ভবত ভালোভাবে সিদ্ধ হয়নি, তাছাড়া লবণ এবং হলুদ সম্ভবত কম এবং মসলাগুঁড়া একটু বেশিই হয়েছে। মেসে বুয়ার খাবার খেতে খেতে বেশ অভিঞ্জ হয়ে গেছি।
তারপরও একটা সস নিয়ে কোন ভাবেই খাচ্ছিলাম, খেয়াল করলাম সাইফুলের খাওয়া শেষ (হয়তো ক্ষিধা বেশি ছিল)। আমি তাকে বললাম, ভাই, চনাটা খারাপ ছিল এরকম বলা উচিৎ ছিল তোমার, তাহলে আমি অর্ডার করতাম না আর।
পাশ হতে মিশকাত সিঙ্গারা হাতে বলে উঠল, 'আমি আলু খাচ্ছি, লবণের ছিটেফোঁটাও নাই এখানে।'
খাওয়ার জন্য গ্লাসে পানি নিয়ে মুখে দিতে না দিতেই আরেক ধরনের অনুভূতি হল, পানির অবস্থা ও অন্যরকম, যা মুখেও বেশিক্ষণ রাখা সম্ভব না।
আর কিছু খেতে মন চাইল না। বিল দেওয়ার সময় উৎসুক মনে জিজ্ঞেস করেই ফেললাম, 'আপনারা লবণ কম খান কিনা এবং মশলাগুড়া একটা বেশি...'
উক্ত ব্যাক্তি কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে ছিল, কিন্তু কিছু বলে নাই।

যাইহোক, এবার চা-বাগানের উদ্দেশ্যে গাড়ি নিতে গিয়ে খেয়াল করলাম, অনেকগুলো ছাত্রছাত্রী প্রায় লাইন ধরার মত করেই দাঁড়িয়ে আছে। আমরা ভাবলাম হয়তো, কোন নেতা/ পাতি-নেতা আসতেছে, তাদের অভ্যর্থনা জানানোর জন্যই হয়তো দাঁড়িয়ে আছে(যেটা আমাদের দেশের জন্য এক বিস্ময়কর সাধারণ বিষয়)।
আমাদের যেহেতু স্বল্প বাজেট ছিল, সেজন্য পাবলিক গাড়ি গুলোই ছিল ভরসা।
অ..হ্যা,সবার সাথে একটু পরিচয় করিয়ে দিতে ভুলে গেছিলাম। সবাই ছিল, ভার্সিটির ডিপার্টমেন্টের ক্লাসমেট...

◑ মিশকাত (আয়োজকের দায়িত্বে ছিল, যাকে অনেকে মুঠো বলে ডাকে..


◑সাইফুল (আর্থিক ম্যানেজার এবং আয়োজকের দায়িত্বে ছিল, তাঁর বাড়ির উঠান হতে নাকি মায়ানমারের মোরগের ডাক শুনা যায়)


◑রুহুল আমিন (সেন্ট্রাল ব্যাংক, আমাদের কারো আর্থিক সমস্যা হলে, সর্বশেষে যার কাছে দ্বারস্থ হয়, ট্যুরের মধ্যে আমার এবং সাইফুলের টাকা গুলোও আপাতত সে দিয়েছে। খুবই নম্র, তাই মেয়েরাও খুব পছন্দ করে)।


◑আরমানুল ইসলাম (জ্যাকি নামেই পরিচিত। কিন্তু কি কারণে জানি অনেকেই আনিকা নামে ডাকে)


◑এনায়েত (আব্বাসী নামে পরিচিত, ঝাড়ফুঁক দিয়ে থাকে। মিশুক শ্রেণির একজন)


◑মেজবাহ (কোচিং ব্যাবসায়ে জড়িত, গানের গলা ভালো।)

◑ হানিফ ( দক্ষিণ চট্টগ্রামের সবচেয়ে সুদর্শন এবং প্রেমিক পুরুষ। কবি, বাবু ইত্যাদি হাজারো নামে অনেকেই ডাকে। যদিও ট্যুরের মধ্যে প্রধান ফটোগ্রাফারের দায়িত্ব পালন করেছিল)


যাইহোক, গাড়িতে করে চা-বাগান যাওয়ার জন্য সিএনজি ভাড়া করলাম। সাধারণত এসব গাড়িতে জায়গা হয় পাঁচ জনের, সামনে দু'জন,পেছনে তিন'জন।
তারপরও নিজেদেরকে মোটা দাবি করে, এমন দু'জন রুহুল এবং মিসকাতকে সামনে পাঠিয়ে দিয়ে, আগে পিছে করে বাকি চারজন কোনভাবে জায়গা করে নিলাম। বসতে তেমন বেশি অসুবিধে হয়ছে বলে মনে হয়নি। কোনভাবেই রাস্তার এদিকে-ওদিকে তাকিয়ে যাচ্ছি। আশেপাশে খেয়াল করলাম, ধানের জন্য বীজ ফেলে ঘেরাও করা হয়েছে জমিতে, বেশ কিছু কিছু জায়গায় বিভিন্ন শাক-সবজী(পান, মরিচ,লাউ, কুমড়া ইত্যাদি) চাষ করার পাশাপাশি পুকুরের মধ্যে মাছ চাষ ইত্যাদি দেখা গিয়েছে।

কিছুক্ষণ যাওয়ার খেয়াল করলাম রাস্তার অবস্থা অতিরিক্ত পরিমাণ খারাপ। পেছনের সিটে চারজন বসার কারণে সমস্যাটা আরো কয়েক গুণ বেশি মনে হচ্ছিল।

আমাদের মধ্যখানে গানের গলা ভালো, এমন কাউকে খোঁজে পাওয়া ‍দুষ্কর হলেও, আমাদের বেসুরে গলার ..
*বকুল ফুল বকুল ফুল
*নিকষ কালো
*সেই তুমি
*আঁর বউয়া হালা
ইত্যাদি শ’খানেক গান শুনার পরও ড্রাইবারের চোখে মুখে বিরক্তির কোন চাপ না দেখে একটুখানি মুগ্ধও হয়েছিলাম। শাটলে থালে থালে সবার সাথে মনের সুখে চিৎকার করে গাওয়ার মাঝে আলাদা এক আনন্দ পাওয়া যায়, যা কখনো অন্যকে বুঝানো সম্ভব না। যাইহোক, আমাদের বেসুরেবগলার গান গুলো শুনে অন্য কারো বিরক্তিবোধ আসুক বা না আসুক, আমাদের বিরক্ত আসতেছে না, এতটুকুই যথেষ্ট। 'মনের সুখই বড় সুখ'।

আশেপাশে বেশকিছু চা-বাগান দেখা যাচ্ছে। যাইহোক, প্রায় ত্রিশ/চল্লিশ মিনিট পর গাড়ি থামল। গাড়ি হতে তড়িঘড়ি করে নামার পর মনে হলো, এবারের জন্য কোনভাবেই বেঁচে গেলাম।

গাড়ি হতে নেমে, সামনে চোখ যেতেই চোখ জুড়িয়ে গেল, সবুজের আলোড়ন দেখে। জীবনানন্দ হলে, তৎক্ষনাৎ বেশ কয়েকটা কবিতা হয়তো লিখে ফেলতে পারতেন। আমি কবি নই, তারপরও কবিতা লেখার জন্য মনে মনে বেশ কয়েকটি শব্দ চয়নের চেষ্টা করলাম, না, কিন্তু কোন শব্দই মাথাই আসতেছে না ("কবির শব্দ ভাণ্ডার ফুরিয়ে গেছে"), মাইকেল মধুসূদন হলে, হয়তো নিজ হতে কয়কটা কঠিন কঠিন শব্দ বানিয়ে নিয়ে কবিতা লিখে ফেলতে পারতেন।
এর আগে এত বড় চা-বাগান, দেখার সৌভাগ্যটা আমার হয়ে ওঠে নি, যদিও ঈদগড়, বাইশারি, রামুতে (কক্সবাজারের এলাকার নাম), ছোটখাটো কিছু বাগান দেখিয়ে, আমাকে পরিচয় করাই দিয়েছিল কিছু চা-বাগানের সাথে, এলাকার বন্ধুরা। ছবিতে চা-বাগানের সাথে উক্ত চা-বাগানের কোন মিল খোঁজে পাইনি তখন।
আর এখন আমার সামনে এক বিশাল,(যতটুকু চোখ যায়) চা-বাগান।
আমাদেরকে লক্ষ করে, দারোয়ান গেইটের দরজা লাগিয়ে দিল, আমরা পাশে গিয়ে দাঁড়াতে জিজ্ঞেস করল, কোথা হতে আসছি।
উত্তর দিলাম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, ঘুরার জন্যই আসলাম।
আর কিছু না বলে, খুবই উৎফুল্ল মনে প্রবেশ করলাম। বাকিগুলো ছবিতেই দেখুন।


চা-বাগানে প্রবেশ করতে না করতেই, সাইফুল ডাক দিয়ে,'সবাই এদিকে তাকাও'


আমাকে সিঙ্গেল নেওয়ার জন্য পোঁজ দিয়েছিলাম,  অথচ সবাই চলে আসল।

জ্যাকিকে দেখা যাচ্ছে? 

ক্যামরাম্যান(রুহুল) পোঁজ শিখায় দিছে।

সবুজের সমারোহ 

পাশে কারো হাত ধরে, ঠিক এভাবে হাটঁতে পারলে, ছবিটা আরো ভালো আসত।


গ্রুফ ছবি তুলে দেওয়ার জন্য কেউ ছিল না বলে, সেলফি নিতে হচ্ছে।

ফটোগ্রাফারের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে, সবার সাথে ছবি তুলতে না পাওয়ার ভয়ে, তাড়াহুড়ো করে তুলে ফেললাম।

জ্যাকি, কোন জোক্সটা বলতেছিলি?
আমার হাসিটা!! 

ভালো ছিল না এটা?

কি শুরু করচছ তুরা?

সানগ্লাসটা দেয় না ভাই!

ক্যামরাম্যানের নির্দেশ অনুসরণ করতেছিলাম 

মাঝেমধ্যে জীবনানন্দ হয়ে পৃথিবীতে ফিরে আসার লোভ হয়, শুধুই প্রকৃতিকে আরো ভালোবাসার জন্য। 

মিশকাত যখন আমার সাথে ছবি তুলতে চাই।

ঠিক ভাবে দাঁড়া সবাই।

রুহুল ভালোই ছবি তুলে।

সবাইকে এক ফ্রেমে বন্দি করার চেষ্টা। 

প্রকৃতি যখন আমাকে পছন্দ করে।

আচ্ছা, যাই তাহলে। ইকোপার্কে দেখা হবে।

যাইহোক, সবাই খুব উৎফুল্ল মনে বের হাওয়ার সময়, খুশি হয়ে কিছু টিপস্(টাকা) দিতে গেল, দারোয়ানকে। টাকা হাতে নেওয়ার পর গুণে দেখে আবার ফেরত দিয়ে, মনে মনে কি একটা বলল। গালিই দিয়েছে শিউর। বুঝতে পারলাম, আরেকটু বাড়িয়ে দেওয়া উচিত ছিল, কিন্তু, ওনার আচরণ দেখে কিছু একটা বলতে গিয়েও, চুপচাপ গাড়িতে উঠে গেলাম। ওনার আচরণটা আসলেই একটু খারাপ লাগার মতোই ছিল।
যাইহোক, সবাই যখন গাড়িতে উঠার পরও, ঐ ব্যাক্তির আচরণটি নিয়ে কথা বলতেছিল, তখন ওর বিষয়টি ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করতে বললাম সবাইকে।
আবার শুরু হল বেসুরে গলার গান। বেশ কিছুক্ষণ গাড়িতে চড়ার পর আবার আগের জায়গায়(চাঁদপুর) ফেরত আসলাম।
এখান হতে ইকোপার্ক যাব, বাসে করে। ততক্ষণে মেজবাহও আমাদের সাথে যোগ হয়ে গেল। আশেপাশে আর কোন রেস্টুরেন্ট না থাকায়, আবারও পূর্বের রেস্টুরেন্টে গিয়ে, বাহির হতে কিছু কেক-কলা নিয়ে ভেতরে বসলাম। আসার আগ মূহুর্তে সৌজন্যের সাক্ষাতে চা খেলাম। মনে হয়ছিল, বাজারে চিনির দাম হাজার খানেক হয়ে গেছে, চা'য়ে চিনি দিয়েছিল কিনা সন্দেহ তৈরি হয়েছিল।

রেস্টুরেন্ট হতে বাহির হতে না হতেই রিমঝিম বৃষ্টি নামল। এর অল্প কিছুক্ষণ পর একটা বাসে উঠে গেলাম। আমি বাসের সামনে, ড্রাইবারের পাশে গিয়েই বসলাম, পেছনে জায়গা ছিল না বলে। রাস্তার দু'ধারে বেশ সাজানো গাছ। প্রধান সড়ক হিসেবে বেশ পরিপাটি, কিন্তু খুবই সরু ছিল।
বাস কতদূর এগুতে না এগুতে ঝুম বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল। কানে হেডফোন গুজিয়ে দিলাম, ফুল ভলিউমে। তাহসানের প্লে-লিস্ট হতে গান চলতেছিল।
◑প্রেম তুমি আসবে এভাবে,
◑তাই তোমাকে
◑হঠাৎ এসেছিলে
◑আলো আলো
◑বৃষ্টি ছোঁয়ে
◑মোমের দেয়াল
ইত্যাদি গানগুলো।
রাস্তায় প্রায় পানি উঠার মতো অবস্থা, এভাবেই বৃষ্টি হচ্ছিল। বর্ষাকালে দীর্ঘদিন অনাবৃষ্টির পর শ্রাবণের আকাশটা যেন ভেঙে পড়বে। বেশ কিছু ছবি এবং ভিডিও ধারণ করলাম।



এরপর আরও কিছুদূর এগুতে না এগুতে, হঠাৎ ফাঁকা রাস্তায় জ্যাম দেখে চোখ আটকে গেল। দেখলাম গাড়ি ভর্তি মানুষ নিয়ে এক শ্যামলী(গাড়ি), নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে প্রায় খাঁদে (নালা টাইপের) পড়ে গেল, গাছের কারণে হয়তো আটকে গেছে। লোকমুখে শুনা গেল, গুরুতর তেমন কিছু না ঘটলেও নাকি, বেশ কয়েকজন হতাহত হয়েছে। যাইহোক, আলহামদুলিল্লাহ, তেমন সিরিয়াস কিছু হয়নি শুনে একটু ভালোই লাগল। এক্সিডেন্টের ভিডিও এবং ছবি

বৃষ্টির তালে তালে গাড়িটাও সমান বেগে চলতেছে, কিন্তু পথ যেন শেষ হচ্ছেই না।
সময় তখন দুপুর একটা পেরিয়ে গেছে। গাড়িটা সিট ভর্তি থাকলেও, স্কুল ছুটি হওয়ার কারণে এক ঝাঁক ছাত্র-ছাত্রী হরদম করে উঠে পড়ল। গাড়ির এসিস্ট্যান্ট যদিও শহরের এসিস্ট্যান্টের মতো 'ডানে ঘুরে পেছনে হাঁটেন ' এমন কোন বাক্য ব্যায় করতেছে না। উল্টো যাত্রী না তুলতে চাইলে, বেশ ক'জন স্টুডেন্ট রেগে গিয়ে ধমকের সুরে কথা বলায়, এসিস্ট্যান্ট চুপ হয়ে গেল। বৃষ্টির কারণে, এ স্কুল ছুটির সময়ে, সড়কটি যেন গাড়ি সংকটে পড়ে গেল।
প্রায় অনেকক্ষণ বাসে চড়ার পর, মনসুরা বাজার, নামক স্থানে অবতরণ করলাম।
বৃষ্টিও যেন এতক্ষণ গাড়ি হতে আমাদের নামার অপেক্ষায় ছিল। বৃষ্টি থামার পর আকাশের দূর প্রান্তে ঝাপসা কালো মেঘলো মুগ্ধ হয়েতাকিয়ে তাকার মতোই ছিল।
এখন মেজবাহ সহ, সাতজন হওয়ায়, দু'টা সিএনজি ভাড়া করে রওনা দিলাম ইকোপার্কের উদ্দেশ্যে।
চারদিকে ঠিক স্বাভাবিক কিছু ফসলের ক্ষেত দেখার মতো তেমন কিছুই ছিলনা।
প্রায় অনেকক্ষণ পর, দু'পাশে লম্বা লম্বা সুপারি গাছের সারি, গাছের ডালে ডালে বেশ কিছু বাবুই পাখির বাসা(আহ্ এখন দেখা যায় না বললেই চলে, নেটওয়ার্কিং অবস্থা), মুহুর্তটা বেশ উপভোগ করার মতো ছিল।
এর অল্প কিছুক্ষণ পর, গাড়ি একটা গেইটের সামনে এসে থেমে গেল।
গাড়ি হতে নেমে, মাথার উপরে দেয়ালের লিখন পড়ে দেখলাম 'বাঁশখালী ইকে পার্ক'। বাকিগুলো ছবিতেই দেখুন..

ইকোপার্ক উপলক্ষে ড্রেস আপ পরিবর্তন করার পর, ব্যাকগ্রাউন্ড ভিউটা ভালো ছিল...


গ্রুফ ছবি তুলার চেষ্টা। 

ফটোগ্রাফারের নির্দেশ,"সামনে থাকা"

ফটোগ্রাফারের নির্দেশ,"ডানে থাকা" (মিরর ক্যামেরা)

ফটোগ্রাফারের নির্দেশ,"বামে থাকা"(মিরর ক্যামেরা)

গ্যাং মোডে ছবি তুলার চেষ্টা 

আবারও গ্রুফ ছবি

ছবিটা ভালোই আসছে না?

আমার সাব এসিস্ট্যান্ট (ফটোগ্রাফার নিয়ে)

ওগো নুমু, একই ছাতার নিচে, রিমিঝিম বৃষ্টিতে আমার আঙ্গুলে আঙ্গুল রেখে যদি হাটতে চাও চলে এসো।

নুমুর কথায় মনে পড়ে গেছিল, ছবিটা তুলার মুহুর্তে। 

তোমার ছাতার হারিয়ে গেলে, আমায় স্মরণ করিও।

ইকোপার্কের শেষ ছবি।

ইকোপার্ক আগে কখনো যাওয়া হয়নি, বিধায়, ইকোপার্ক জায়গাটা আসলে কি তা নিয়ে অনেকটা আগ্রহ ছিলো। কিন্তু এটা দেখার পর, তেমন আশানুরূপ লাগল না, হয়তো এরচেয়েও ভালো কিছু আশা ছিল। তবে, মৃদু বৃষ্টির সাথে ঝুলন্ত ব্রিজে আর সিঁড়ির পাশে যে বেশ কয়েক খানি ছবি তুলা হয়েছিলো তা বেশ ভালো লাগার মতোই ছিল।
তাছাড়া, ইকোপার্কের পুকুরের পানি গুলো যাওয়ার জন্য যে, স্লুইসগেট গেট গুলো ছিল, তা অন্তত সবার মন ছুঁয়ে যাবার মতোই।



যাইহোক, অবশেষে বের হয়ে পড়লাম, ইকোপার্ক হতে। গেইটের সামনে গাড়ি নিতে গিয়ে দেখি, যে গাড়ি দু'টা করে আমরা এসেছিলাম, তার একটা আছে।
ড্রাইভারকে চেনার পর, হাসিমুখেই গাড়িতে উঠে বললাম, 'মামা, গাড়ি স্টার্ট দেন তাহলে।'
এটা বলতে না বলতে বলল, গাড়ি ভাড়া বাড়িয়ে দিতে হবে।
আমরা বললাম, 'কেন? আপনার গাড়িতে করেই আসছি না? যতটাকা দিয়ে আসছি, তত টাকা দিয়েই তো যাবো।'
ড্রাইভার প্রায় আসার ভাড়া হতে দুই-তৃতীয়াংশ বেশি চাচ্ছে। এরপর পরই অন্য আরেকটা গাড়ি আসায়, ওনার সাথে যখন কথা বলতে গেলাম, আগের ড্রাইভার উনার সাথেই একটা চুক্তি করে ফেলল যে, উক্ত এমাউন্টের নিচে হলে না যাওয়ার জন্য।
অর্থাৎ, বিষয়টা হলো এরকম, ওখানে তেমন বেশি গাড়ি ছিল না বিধায়, সুযোগ বুঝে, আমাদের কাছ হতে বাধ্য করে বেশি টাকা আদায় করা।
নিম্ন মানসিকতা এবং সুযোগ সন্ধানী মানুষটির অবস্থা দেখে প্রায় সবাই রেগে আগুন, ভদ্র ভাষায় কয়েকটা নীতিবাক্য শুনাতে তেমন দেরি করিনি, আমরাও।
কিন্তু এখন কি করার!
একটাও গাড়ি নাই। একজন বলে উঠল, বয়কট কর গাড়িগুলো কে।
প্রচন্ড বিরক্তি নিয়ে, হাঁটা শুরু করলাম, সামনে আসা অবস্থায় কোন গাড়ি ফেলে উঠে যাব।
বেশ কতটুকু যাওয়ার পর একটা পাওয়া গেল, রুহুল, সাইফুল এবং আমি ছাড়া বাকি সবাইকে গাড়িতে তুলে দিয়ে বললাম, সমানে গাড়ি ফেলে, আসতে বলিছ।
আমরা তিনজন হাঁটতে হাঁটতে, ক্ষিধার অবস্থাও তুমুল হতে শুরু করেছে।
বৃষ্টির পরিমাণ ও বেড়ে গেছে, প্রায় মুষলধারে বৃষ্টি বলা চলে।
পায়ে জুতার অবস্থা খারাপ হয়ে গেছে, হাঁটতে কষ্ট হচ্ছে।
কিন্তু কোথাও কোন গাড়ি নেই। অনেক্ষণ হাঁটার পর সামনে একটা রিকশা দেখা গেল। ড্রাইভার বলল, বৃষ্টির পরিমাণ আরেকটু কমলে, রওনা দিবে। বৃষ্টির অবস্থা বেশি হওয়ার মোবাইল এবং জরুরি জিনিসপত্র গুলো পলিথিন করে, ব্যাগে রেখে, শার্ট খুলে টিশার্ট পরিধান করে নিলাম।
বৃষ্টির অবস্থা হালকা কমলে, আমরা রওনা দিলাম। রাস্তার অবস্থা প্রচন্ড পরিমাণ খারাপ হওয়ার কারণে, রিকশার মধ্যে মাথায় বেশ কয়েকটা আঘাতও ফেলাম।
প্রায় আধাঘন্টা পর, সবার সাথে দেখা হলো।
যাইহোক, ক্ষিধা নিবারণের জন্য হোটেলে গিয়ে দেখি, খাবার শেষ হয়ে গেছে।
তারপর, জ্যাকিসহ বেশ কয়েকজন একেবারে 'গোনাগরি' নামক স্থানে এসে খাওয়ার প্রস্তাব দিল, এবং সি-বিচে না যাওয়ার উসখুস করতে লাগল।
আমি সাধ্যমতো বেশ কড়া গলায় বললাম, প্লান অনুযায়ী সব জায়গায় যেতে হবে, এদিকে তো কখনো আসা হবে না, যদিনা কোন সম্বন্ধ তৈরি হয়।
যাইহোক, সবাই কালীপুর নামক স্থানে এসে, বেশ খোঁজাখেজির পর এক হোটেল পাওয়া গেল। যদিও
হোটেলে নাকি খাবার সর্ট। আশেপাশে কোন হোটেল না থাকায়, দুপুরে খাবারটা কোনমতে বিকাল চারটার দিকে খেয়ে নিলাম, বেশ কয়েকজন তৃপ্তির ঢেঁকুরও তুলল।
কালীপুর স্টেশন হতে আবার গাড়িতে করে, সি-বিচে চলে গেলাম। রাস্তার অবস্থা এটাও খারাপ। সবাইকে ক্লান্তি ছুঁয়ে দিল। চোখবুঁজে কোন ভাবে, গাড়ি হতে নামার পর, বাকিগুলো ছবিতেই দেখুন....


জ্যাকির সেলফিতে, আমরা সবাই

সাইফুলের মতো পোঁজ দেওয়ার চেষ্টা

আমরা সবাই এক ফ্রেমে






মাঝি ভাই ভালো ছিল

যাচ্ছি তাহলে.
ব্রু
অবশেষে বাসায় 


পায়ের বেহাল দশা


বিচের মধ্যে ফুটবল খেলতেছিল, অনেকগুলো ছোট ছোট দল হয়ে। আমরা যারা গিয়েছিলাম, তাদের মধ্যে মনে হয়না, আমি ছাড়া কেউ ফুটবল খেলা পছন্দ করে। তারপরও বেশ কয়েকজন আগ্রহ দেখাল খেলার জন্য। এমন সময় এক ক্যামেরা ম্যান আমাদের একটা দোকান দেখিয়ে বলল,'ঐ দোকানে খেলার জন্য ফুটবল ভাড়া দেয়।'
কিছুক্ষণ পর,আমি এবং রুহুল দুজনে দোকানে গিয়ে বেশ কয়েকজনের কাছে জিজ্ঞেস করার পরও, না বলের খোঁজ ফেলাম, না ঐ ক্যামরা ম্যানের। যাইহোক প্রায় মাগরিবের পর আমরা বিচ হতে উঠে গিয়ে একটা মসজিদের গোসলখানা হতে ফ্রেশ হয়ে গাড়িতে করে 'গুনাগরি' চলে আসলাম।
আসার সময় যে গাড়িটাতে উঠলাম সেও ছিল, আমরা যে গাড়িতে করে বিচে গিয়েছিলাম। যাইহোক, এ ড্রাইভারটা আবার ঐ ব্যাটার মতো করে নাই।
হালকা নাস্তা করার পর,
সাইফুল আর জ্যাকি শহরের বাসের জন্য টিকেট করতে যাচ্ছে, এমন সময় রুহুলের খেয়াল হলো, সে গাড়িতে তার ব্যাগ রেখে আসছে!
সবাই অবাক! এদিক-ওদিক খোঁজাখুঁজি করতে লাগলাম ড্রাইভারটাকে। না পেয়ে আমরা তিন জন রওনা দিলাম ঐ কালীপুর স্টেশনে। যদি ওখানে পাওয়া যায় ইত্যাদি ভেবে....।
বেশ কতক্ষণ পর স্টেশনে গিয়ে দেখি, ঐ গাড়িটা ওখানে নেই। তখন স্টেশন মাস্টারকে যখন ঐ ড্রাইভারের বর্ণনা দিচ্ছিলান তখন, পাশ হতে আরেক লোক বলে উঠল, 'উসমান ভাইয়ের কথা বলতেছে'। ড্রাইভারের মোবাইল নাম্বার ডায়াল করার পর,'সালাম দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, উসমান ভাই কিনা..? '
তখন প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই বলল, আপনাদের ব্যাগ ফেরত দিয়েছি(অর্থাৎ সাইফুলদের কে ফেরত দিছে)। রুহুল, সাইফুলকে কল দিয়ে কনফার্ম হল, ব্যাগ ফেরত দিয়েছে।
আমরা আবার গুনাহগরী এসে বিস্তারিত ওদের কাছ হতে শুনলাম, ' আমরা যখন কল দিছি তখন নাকি ড্রাইভার ব্যাগ ফেরত দিচ্ছে। এবং ড্রাইভার যখন বুঝতে পারল গাড়িতে ব্যাগ আছে, তখন গাড়ি ব্যাক করে, ড্রাইভার নিজ হতে ওদেরকে খোঁজে বের করছে। হালকা কিছু আপ্যায়ন করেছিল,খুশি হয়ে।'

সকাল হতে আসার পর হতে রাস্তার অবস্থা খারাপ, ড্রাইভার, গেইটম্যান, বৃষ্টি, খাবার হোটেল ইত্যাদিতে বেশ অত্যাচারিত হওয়ার পর শহরে যাওয়ার আগ মুহুর্তে ড্রাইভারের এমন সততার চাক্ষুষ সাক্ষী হতে পেরে, বাঁশ খালী মানুষদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল বেড়ে গেল।
এরপর মেজবাহকে ওখান হতে বিদায় দিয়ে শহরে নতুন ব্রিজ পৌঁছালাম রাত নয়টার দিকে। নতুনব্রিজ এসে একেকজন একেক দিকে রওনা দিলে(নিজা বাসার)। পরদিন ভার্সিটিতে অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিতে হবে।

উল্লেখ্যঃ
চট্টগ্রাম হতে বাঁশখালী প্রায় ৪৬.৭ কি.মি. দূরে। এলাকাটি আসলেই দর্শনীয়। দেখার মতো আরও বেশ কয়েকটা জায়গা রয়েছে। মেইন রোডের দু'পাশে সারি করে গাছ লাগানোর ফলে, রাস্তার সৌন্দর্য অনেক খানি বেড়ে গিয়েছে।

পুনশ্চঃ ০১☞ ভালো খাবার হোটেলের সন্ধান না পাওয়াই , ভালো খাবার পাওয়া যায়নি। পরিবেশবেধে, রুচি, স্বাধ এবং খাবারের পরিবর্তন হয়। এজন্যই হয়তো খাবারগুলো আমাদের রুচি সম্মত ছিল না।
পুনশ্চঃ ০২☞ রাস্তার অবস্থা আসলেই খারাপ ছিল, বেশ কিছু নির্মাণাধীন।
পুনশ্চঃ ০৩☞ গেইটম্যান আর ড্রাইভারের (ইকোপার্ক) আচরণটা আসলেই মনঃক্ষুণ্ন হওয়ার মতো।।











Reactions

Post a Comment

0 Comments