শাটলে একদিন

দের ছুটির পর আজ ১৮ই জুলাই, অ্যাসাইনমেন্ট জমা দেওয়ার জন্যই ক্যাম্পাসে যাওয়া। অন্য কোন ক্লাস ছিল না বিধায় দুপুর ১টা ৩০ এর শাটল অর্থাৎ প্রায় ৩ ঘন্টা আর বাসায় পোঁছাতে পোঁছাতে প্রায় ৪ ঘন্টা মত লাগবে। ভার্সিটি দূরে হওয়ার কারণে এই একটা বিশাল সমস্যা; সময় নষ্ট।
যাইহোক, আমি ফ্রেন্ডদেরকে বললাম, থেকে যা একেবারে দেড়টার ট্রেনে(ভার্সিটি হতে শহরের উদ্দেশ্যে প্রথম) আড্ডা দিতে দিতে যাব, অনেকেই আমার মতামত অনুগ্রহ করলেও, কয়েকজন বলল ততক্ষণে বাসায় পৌঁছে ঘুমাতে পারব। সাথে সাথে সবার মতামতও পাল্টে গেল, সবাই গাড়িতে করেই চলে যাবে।
আমি বললাম একাই থেকে যাব। ততক্ষণ বই পড়ে সময়টা ভালোই কাটানো যাবে, আর বইটাও শেষ হবে।

যে কথা সেই কাজ। শাটলে জানালার পাশে আরামদায়ক এক সিট গ্রহণ করে, খুব মনযোগ সহকারে পড়তে লাগলাম, Haemin Sunim এর বিখ্যাত বই ''The things you can see only when you slow down".
লেখাগুলো এতই গভীর যে, খুব মনযোগ সহকারে না পড়লে, আমার মত ছোটখাটো পড়ুয়ার মাথার উপর দিয়ে যাবে।

বেশ কতটুকু পড়ার পর খেয়াল করলাম, শাটলে ছাত্র-ছাত্রীর আনাগোনা বেড়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে।
জানালার বাইরে তাকিয়ে দেখি কিছু ছেলে(যাদেরকে, আমাদের শিক্ষিত সমাজ টুকাই বলে আখ্যায়িত করেছে) গাছ হতে কদম ফুল ছিঁড়ে নিয়ে এসে,
'ফুল নিবেন ফুল নিবেন, কদম ফুল।
জানালার পাশে কিছু মেয়েদেরকে লক্ষ করে, আপা ফুল লাগবো? চারটা বিশ টাকা।
জৈনক আপা: বিশ টাকার ছয়টা পারবি?'

এ বলে বেশ কয়েকজন মেয়ে কদম ফুল কিনে নিয়ে, অঙ্গ-ভঙ্গি এদিক-ওদিক করে ছবি তুলতে লাগল।
আর আমিই মনে হয় তাঁদের একমাত্র দর্শক, খুব মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছি।
সকালে ভার্সিটিতে আসার সময়, রুহুল আমিনকে, নিচের এই ছবিটি দেখিয়ে বলেছিলাম, ঠিক এই পোজে একটা ছবি তুলব কদম ফুল দিয়ে...
Download from FB
সে থাকলে হয়তো কিছু কদম কিনে, না হয় ওদের কাছ হতে ধার নিয়েই ছবি খানা তুলে ফেলতাম।

আরকেটি বিষয় খেয়াল করলাম, ছেলে গুলো শুধুই মেয়েদেরকে জিজ্ঞেস করছিলো ফুল লাগবে কিনা। আশ্চর্য! আমার মতো ছেলেরাও তো ফুল পছন্দ করে, অন্ততপক্ষে জিজ্ঞেস তো করতে পারত, ফুল লাগবে কিনা! ওদের সাব-কনশাস মাইন্ডে এটা কে ঢুকাই দিল যে,
শুধু মেয়েরাই ফুল পছন্দ করে?
যাইহোক, ট্রেন ছাড়ার সময় হলো, তার দীর্ঘ গলা ছিঁড়ে চিরচেনা এক কর্কষ আওয়াজ বেরিয়ে এল, তখন পড়তেছিলাম 'First love' নিয়ে লেখা অনুচ্ছেদটি।
অসাধারণ একটা অনুভূতি নিয়ে এটা পড়ার পর, বইটি ব্যাগে রেখে, কানে হেডফোন গুজে দিলাম,
গান চলতেছিল শাহরুখ আর কাজলের;

"Tum paas aaye,yun muskuraye
...........
Tumne na jaane kya sapne dikhaye
............. .............
Ab to mera dil,jaage na sota hai
Kya karun haaye,kuch kuch hota hai.."


এমন সময় বাইরে তাকিয়ে দেখি এক অপরিচিতা, আমার সামনের সিটে বসে ছিল, কদম গুচ্ছ হাতে নিয়ে প্রকৃতিকে প্রেম নিবেদন করতেছিল।
বর্ষাকালে দীর্ঘদিন অনাবৃষ্টির পর এই শ্রাবণের আকাশে মেঘেরা যখন অন্ধকার হয়ে খেলায় মেতে উঠতেছিল, ঠিক মনে হচ্ছিল যেন কুমারী মেয়ে প্রতিবিম্বের সামনে সাজতে ব্যাস্ত, তখন অপরিচিতার হাতে কদম গুচ্ছ দেখে, পরিবেশটা এতই রমনীয় হয়ে উঠেছিল যে, খুব উৎফুল্ল মনে অনেক্ষণ তাকিয়ে ছিলাম।
যেভাবে কল্পনায় তাকিয়ে থাকতে ভালো লাগে, আমার নুমুর, হলুদ ব্লাউজের সাথে 'বেবি পিংক' রং এর শাড়ি কোমড়ে গুঁজে দিতে দিতে ঘর্মাক্ত শরীরে কর্মব্যাস্ত থাকা।

খুবই উচ্ছ্বসিত মনে বেশ কয়েকটা স্থিরচিত্র ও ধারণ করলাম, নিচে একটি দেওয়া হলো:



দেখি মোবাইল ফোনও আমায় হতাশ করেন নি, ভালোই আসছে ছবিগুলো।
ট্রেন ষোলশহর আসার পর, নেমে যাওয়ার ঠিক আগ মুহুর্তে একবার মনে হয়েছিল, ছবিগুলো মেয়েটিকে দেখাব কিনা! হয়তো খুশি হয়ে সে আমার কাছ হতে ছবিগুলো নিতে চাইবে।
কি একটা অদ্ভুত কারণে ছবিগুলো দেখানো হল না। বাসায় এসে আফসোস হল, মেয়েটিকে ছবিগুলো একবার দেখিয়ে ধন্যবাদ দেওয়া উচিত ছিল, এই দিনে শাটলে ছোট্ট জার্নিকে, অনেক দীর্ঘায়িত এক অনুভূতি অনুভব করার, সুযোগ করে দেওয়ার জন্য।

হে অপরিচিতা,
তোমার প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা বোধ রহিল, অনন্তকাল পর্যন্ত।
Reactions

Post a Comment

0 Comments