Covid19 হতে এখনো বিশ্ব সম্পূর্ণভাবে সুস্থ হয়ে উঠতে পারেনি। এখনো এই বিশ্বের অনেক দেশে মহামারি রুপ ধারণ করে বসে আছে এই মরণঘাতী ভাইরাস।
চারদিকে লকডাউন- স্কুল, কলেজে, বিশ্ববিদ্যালয়, হাটবাজার, অফিসসহ সবকিছুই যেন থমকে গিয়েছিল।
ফলাফল স্বরুপ, শিক্ষার্থীরা আসক্ত হয়ে পড়ছে বিভিন্ন গেমিং, মাদকসহ বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকান্ডে।
আমাদের এই শিক্ষাব্যবস্থাকেই, শিক্ষার্থীদের এসব মন মানসিকতার জন্য, আমি এর জন্য দায়ী করি। কেন আজ শিক্ষার্থীরা বই পড়ার মধ্যে আনন্দ না খোঁজে, অনৈতিক কর্মকান্ডে লিপ্ত হয়ে পড়ছে।
কোমলমতি শিশুরা মূলত যেখানেই আনন্দ পাই, সেদিকেই ঝাপিয়ে পড়বে। আমার মনে বারংবারই প্রশ্ন জাগে, কেন শিশুরা বই পড়াই আনন্দ খোঁজে পাচ্ছে না!?
যাইহোক, মূল প্রসঙ্গে আসা যাক,
আমি নিজেকে কখনো বই পড়ুয়া হিসেবে দাবী করিনি।তবে নন-একাডেমিক বই পড়ার প্রতি হালকা কিছুটা আকর্ষণ বোধ করতাম ছোটবেলা হতেই। এখানে, কিছুটা আকর্ষণ বলতে নতুন বই দেখলেই পৃষ্ঠা গুলো এদিকে-ওদিক উল্টেপাল্টে দেখতাম। একাডেমিকভাবে শিক্ষিত কোন পরিবারে বেড়ে উঠিনি বলে, ক্লাসের বইগুলো ছাড়া অন্যান্য বইগুলো ছিলো ধরাছোঁয়ার বাইরে। তারপরও ছোট থাকতেই বড় ভাইদের সহপাঠ/সাহিত্যের বইগুলো পড়ার চেষ্টা করতাম।
সম্ভবত ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে থাকতে, 'বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র, ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরিতে' তে ফর্ম ফিল আপ করে, প্রতি সোমবারে একটা একটা গল্প, উপন্যাস ইত্যাদি গুলো নিয়ে পড়ার চেষ্টা করতাম। এই মুহুর্তে, যতটুকু মনে আছে, আমার পড়া প্রথম উপন্যাসটি হল জাফর ইকবাল স্যারের 'ইকরাস' বইটি।
এরপর হতে ধীরে ধীরে বেশ কিছু বই পড়া হয়েছে।
যাইহোক, ২০২১ সাল ছিল, নন-একাডেমিক বই পড়ার জন্য এক সুবর্ণ সুযোগ। সারাদিন বাসায় বসে থাকা, মুভি দেখা আর বই পড়া নিয়েই বেশ কাটিয়ে দিতে পেরেছি দিনগুলো। মূলত, বলা যায়, এখন সাহিত্যের প্রতি আমাকে আলাদা একটা দৃষ্টিভঙ্গি এবং নেশা তৈরী করে দিয়েছে। তাই, ২০২১ সালকে ধন্যবাদ জানাতে এবং স্মৃতির পাতায় এই অধ্যায়টিকে ধরে রাখতেই আজকে এই লেখা।
যাইহোক, এই ২০২১এ বেশ কিছু বই পড়া হয়েছে, এরমধ্য হতে, আমার দৃষ্টিতে কিছু ভালো রেটিং পাওয়ার মতো বই নিয়ে এখানে আলোচনা করব। প্রথমেই বলে দিচ্ছি, আমি কোন বিশাল বই পড়ুয়া কিংবা লেখক না যে, আমার এই কথোপকথন গুলো আপনার ভালো লাগবেই। তাই, ক্ষুদ্র এই পাঠকের দৃষ্টিভঙ্গিকে, অন্যকিছু ভাববেন না...
✪ ইকারাস
লেখকঃ জাফর ইকবাল
ধরণঃ বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী
কাহিনী সংক্ষেপঃ যতটুক মনে আছে, এর মধ্যে আমার পড়া প্রথম উপন্যাস। সম্ভবত ২০১২ সালের দিকেই পড়েছিলাম, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র হতে সংগ্রহ করে।
এক দ্বীপের মাঝখানে অত্যাধুনিক এক হাসপাতালে ডক্টর কাদের মানব ভ্রুণের এদিক-ওদিক করে, নব্য প্রজাতির জন্ম দেওয়ার গবেষণায়, ৩৩৩নং রুমের মেয়েটির জন্ম দেওয়া ছেলের পিটের এক জোড়া পাখির পালকের মতো ডানার রহস্য(এলিয়েন মনে করা) উন্মোচন করার জন্য কয়েকদল বিজ্ঞানী শিশুটিকে হত্যা করতে চাইলে, জহুর শিশুটিকে নিয়ে দূর গ্রামে পালিয়ে যায়। বুলবুল নামের শিশুটি যতই বড় হচ্ছে, ততই ডানা দু'টো বড় হচ্ছে। ডানা দু'টো কাপড়ের নিচে লুকিয়ে রাখতে যখন সমস্যা হচ্ছে, তখন আশেপাশের মানুষ জানিয়ে যাবার ভয়ে জঙ্গলে পালিয়ে যায়। এরপরের রহস্যগুলো জানতে অবশ্যই পড়ে দেখুন...
✪ বনলতা সেন
লেখকঃ জীবনানন্দ দাশ
ধরণঃ কাব্যগ্রন্থ
কাহিনী সংক্ষেপঃ আশ্চর্যরকমের সুন্দর এই কাব্যগ্রন্থ, এই বনলতা সেন!
বৃক্ষ, মাঠ-ঘাট, বাতাস, পোকা-পাখি ইত্যাদির মধ্যেইও বনলতাকে খোঁজে পাওয়া যায়।
✪ ছাড়পত্র
লেখকঃ সুকান্ত ভট্টাচার্য্য
ধরণঃ কাব্যগ্রন্থ
কাহিনী সংক্ষেপঃ মাত্র একুশ বছর বয়সে পরপারে চলে যাওয়া, এ কবি যেন বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুলের রুপ ধারণ করেই এসেছিলেন। এ সমাজের হতদরিদ্র মানুষের উপর অনীহা, আর ব্রিটিশ সম্রাজ্যের আধিপাত্য হতে মুক্তির আহ্বনাই ছিল - এ কবির মূল ভাবনা।
✪ মানুষ জীবনানন্দ
লেখকঃ লাবণ্য দাশ
ধরণঃ জীবন রচনামূলক
কাহিনী সংক্ষেপঃ কবির স্ত্রী কতৃক রচিত ‘মানুষ জীবনানন্দ’ জীবন রচনামূলক বইটি কতটা যে, গুরুত্বপূর্ণ বই হতে পারে, তা শুধু জীবনানন্দ প্রেমিরাই বুঝতে পারবে। কবি জীবনানন্দ- মানুষ জীবনানন্দ হিসেবে কেমন ছিল. এ নিয়েই মূলত বইট রচিত। কবি তাঁর সন্তান. স্ত্রী, মা-বাবা, প্রতিবেশির প্রতি কেমন ছিল, এবং তাঁর এ দারিদ্র অবস্তায় কিভাবে তাঁর কলম চালিয়ে গেছেন, তা বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
লোকমুখে শুনা যায়, কবির সাথে স্ত্রীর তেমন ভালো সম্পর্ক ছিল না, কিন্তু বইটি পড়ার তেমনটা মনে হয়নি।
✪ বৃষ্টি বিলাস
লেখকঃ হুমায়ূন আহমেদ
ধরণঃ উপন্যাস
কাহিনী সংক্ষেপঃ বৃষ্টি বিলাস গল্পের মূল নায়িকা শামা, বাড়ির বড় মেয়ে, কলেজ পড়ুয়া, খুবই রূপবতী, হঠাৎ করে কাউকে চমকে দেওয়াতে খুব বেশি মজা পান। এশা, মন্টু, তৃণা হতে শুরু করে গল্পের সব চরিত্রের মধ্যে আলাদা আলাদা গুণ রয়েছে, যা পাঠককে হাসাতে বাধ্য করবে। যাইহোক, শামার বাবা আব্দুর রহমান তার অফিসের এক সহকর্মীর সাথে বড় মেয়ে শামার হুট করে বিয়ে ঠিক করে ফেলে। এদিকে শামা বাড়িওয়ালা মুত্তালিবের টেলিফোন হতে এশা সেজে প্রায়ই আতাউরের সাথে রসিকতা করত।
একসময় শামার বাবা আতাউরের একটু অসুখের কথা জানতে পেরে, অন্য জায়গায় বিয়ে ঠিক করো ফেলে।
শেষ মূহুর্তে, আতাউরের এক চিঠি পাঠকদের অশ্রু ফেলতে বাধ্য করবে।
শামা আতাউরের উদ্দেশ্য কোন এক বড় সিদ্ধান্ত নিয়ে কাঁদছে।।
✪ অর্ধেক নারী অর্ধেক ঈশ্বরী
লেখকঃ আহমদ ছফা
ধরণঃ অনেকটাই আত্মজীবনীর মতো
কাহিনী সংক্ষেপঃ এক অন্যরকম আহমদ ছফাকে দেখে আশ্চর্যের সীমা থাকে না।
ভেবেই নিয়েছিলাম, চিরকুমার ছফার জীবনে কখনো নারীর ধরা-ছোঁয়া আসে নি। কিন্তু আমার এ ধারণাটাকে ভুল করে, একে একে সোহিনী, দুরদানা, তারপর শামারোখের সাথে প্রেমকাহিনী গুলো এমনভাবে তুলে ধরা হয়েছে, যেন চরিত্রগুলো উপন্যাস হতে বেরিয়ে আসবে।
✪ পুষ্প, বৃক্ষ এবং বিহঙ্গ পুরাণ
লেখকঃ আহমদ ছফা
ধরণঃ আত্মজীবনীমূলক
কাহিনী সংক্ষেপঃ মানবজাতির সাথেও যে বৃক্ষ, পক্ষীর একান্ত প্রেম হতে পারে, এবং তা এমন সুষ্পষ্টভাবে তুলে ধরার ক্ষমতা মনে হয় শুধুই আহমদ ছফারই ছিল।
ছফার বাসার বেলকনিতে, ছাদে, কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিত্যাক্ত জায়গায় ফুল-চারা গাছ লাগানো, এমনকি বেগুন চাষের পর ছফার উৎফুল্লতা, তাছাড়া, এক পা ওয়ালা কাকের সাথে ছফা সাহেবের যে কথোপকথন হতো, তা এতো জীবন্ত আকারে ফুটিয়ে তুলা হয়েছে, যা, পাঠককে নতুন করে ভাবাতে শেখাবে।
✪ ওঙ্কার
লেখকঃ আহমদ ছফা
ধরণঃ উপন্যাস
কাহিনী সংক্ষেপঃ নিরুপায় হয়ে বোবা মেয়েকে বিয়ে করে। একরাতে স্ত্রীকে হারমোনিয়ামে গান গাওয়ার অক্লান্ত চেষ্টা করতে দেখে হঠাৎ করেই মমতা অনুভব করে সে স্ত্রীর প্রতি। ১৯৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান মিছিলের সময়কার একটা মুহূর্তে লেখকের মনে হঠাৎ প্রশ্ন জাগে “কোন রক্ত বেশি লাল- শহীদ আসাদের না আমার বউয়ের?”
মাত্র ৪৩ পৃষ্টার উপন্যাসের মধ্যেও যে এত আবেগ, আনন্দ, উচ্ছাস তুলে ধরা যায়, তা.... পড়েই দেখুন।
✪ দ্য এ্যালকেমিস্ট
লেখকঃ পাওলো কোয়েলহো
অনুবাদকঃ মাকসুদুজ্জামান খান
ধরণঃ উপন্যাস
কাহিনী সংক্ষেপঃ সান্তিয়াগো নামক আন্দালুসিয়ান এক স্বপ্নচারী রাখাল বালককে নিয়ে সাজানো এক গল্পের চলে জীবনদর্শন মূলক, বিশ্বের প্রায় ৮০টি ভাষায় অনূদিত, আন্তর্জাতিক বেস্টসেলার একটি বই।
বাবা মায়ের ইচ্ছে ছিল, ছেলেটা যাজক হয়ে, সমাজে সম্মান অর্জন করবে, কিন্তু ছেলের ইচ্ছে ঘুরে ঘুরে পৃথিবী দেখার। সুতারাং, যেই ভাবা সেই কাজ। বাবার দেওয়া মোহরগুলো দিয়ে, এক পাল ভেড়া নিয়ে, আন্দালুসিয়ার এক জায়গা হতে অন্য জায়গায় ঘুরাঘুরি করতে পৃথিবীকে বুঝার চেষ্টা করে। এমন সময় পর পর দুদিন মিসরের পিরামিডের নিচে গুপ্তধনের একই স্বপ্ন দেখতে ফেলে, উক্ত গুপ্তধনের ১০ভাগের ১ভাগ দেওয়ার চুক্তিতে, এক সন্ন্যাসী তার ব্যাখ্যা দিলেন। কিন্তু গুপ্তধনটি কিভাবে পেতে তার কিছুই বলতে পারলেন না।
কয়েকদিন পর সান্তিয়াগো মরুভূমিতে বসে একটা বই পড়ার সময়, এক বৃদ্ধ রাজার সাক্ষাতে, মিসরের যাওয়ার সঠিক দিকনির্দেশনা ফেলেন, যে কিনা সান্তিয়াগোর অতীত এবং স্বপ্নের বিষয়ে জানত। তারপর, রাজার কাছে ভেড়ার পালটি বিক্রি করে, উক্ত টাকা গুলো দিয়ে মিসরের উদ্দেশ্যে রওনা দিল।
যাত্রা পথে, অর্থের সংকোলানের কারণে, চায়ের দোকানে কয়েকমাস চাকরিও করেন। এরপর, এক ইংরেজ যে কিনা এ্যালকেমিস্ট খোঁজতেছিল, তার যাত্রাপথে সঙ্গী হয়ে এক মরু যুদ্ধ ক্ষেত্রে এসে পড়ে। উক্ত মরুর দেশে ফাতেমা নামক এক মেয়ের প্রেমে পড়ে যায়, সান্তিয়াগো। এমন সময়, এক প্রকৃত এ্যালকেমিস্টের সাথে দেখা হয়ে যায়, সান্তিয়াগোর, যে কিনা তার স্বপ্নপূরণে সম্পূর্ণ করে। বিদায়কালে ফাতেমার প্রথম স্পর্শ....
মূল বক্তব্যঃ স্বপ্নকে আকঁড়ে ধরে, নিজিকে নির্দিষ্ট লক্ষপানে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। স্বপ্নপূরন করতে গিয়ে অবশ্যই বাধাঁ আসবে, এবং প্রতিটা মুহূর্তে যে বাধাঁ আসবে, সেটাকে পুজিঁ করে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার মধ্যেই লুকিয়ে আছে জীবনের আসল রহস্য।
--সাধারণ কিছু কথাকে অসাধারণ ভাবেই তুলে ধরা হয়েছে বইটিতে। যেমনঃ
↠তোমার হৃদয়ের কথা শোনো, সে সব জানে, কারণ, সে এসেছে আত্মার কাছ থেকে! আর একদিন সেখানেই ফিরে যাবে!
↠ফাতিমা তাকে জানায়— মরুভূমি তাদের কাছ থেকে আপনজন কেড়ে নেয়। মাঝে মাঝে আর ফিরে আসে না তারা। আরও বলে,— ”কেউ কেউ সত্যি ফিরে আসে। তখন আশায় বুক বাঁধে অন্যেরা। আমি হিংসা করতাম সে সব মেয়েকে। এখন থেকে আমিও একজনের অপেক্ষায় থাকব।
↠যখন তুমি কিছু পাবার জন্য চেষ্টা করবে তখন পুরো বিশ্বব্রহ্মাণ্ড তা পাই দিতে ফিসফাস করবে!
↠সুখের গোপন উৎস হলো, তোমাকে পৃথিবীর সব গোপন বিস্ময় দেখতে হবে, সেইসাথে মনে রাখতে হবে চামচের উপর থাকা একবিন্দু তেলের কথাও!
✪ ঘুম নেই
লেখকঃ সুকান্ত ভট্টাচার্য
ধরণঃ কাব্যগ্রন্থ
কাহিনী সংক্ষেপঃ এই কাব্যগ্রন্থটির প্রায় কবিতা্য় হলো বিদ্রোহী। অন্যায়, অত্যাচার, শোষনের বিরুদ্ধে সুকান্ত কতটা প্রখর ছিল, তা এই কাব্যগ্রন্থটি পড়লেই বুঝা যায়।
✪ লাল নীল দীপাবলি বা বাঙলা সাহিত্যের জীবনী
লেখকঃ হুমায়ুন আজাদ
ধরণঃ বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস
কাহিনী সংক্ষেপঃ বাংলা সাহিত্যের আদি যুগ চর্যাপদ হতে হাজারো পথ পাড়ি দিয়ে, নানান
✪ The Diary of A Young Girl
লেখকঃ Anne Frank
ধরণঃ Autobiography
কাহিনী সংক্ষেপঃ অ্যানি ফ্রাঙ্কের পরিবার সহ আরো কয়েকটি পরিবার তার বাবার অফিসের লুকায়িত এক বাসায় প্রায় চার বছর অবস্থান করেছিল। ডাইরিটিতে অ্যানি ফ্রাঙ্ক তার দৈনন্দিন জীবনে ঘটে যাওয়া হাসি-দুঃখ-প্রেম-ঝগড়া সব লিখে রেখেছিল। মূল বিষয় হিটলার যে ইহুদিদের প্রতি যে নৃশংস গণহত্যা এবং অত্যাচার চালিয়ে ছিল তা ১২ বছর বয়সী অ্যানি ফ্রাঙ্কের ডায়েরিটিতে ফুটিয়ে উঠিয়েছিল। যখন পড়িতেছিলাম তখন হিটলারের প্রতি যে কতটা ঘৃণা এসেছিল, তা লিখে বুঝানো এই ছোট্ট পাঠকের অসাধ্য।
✪ মাইন ক্যাম্প
লেখকঃ অ্যাডল্ফ হিটলার
অনুবাদকঃ পরিতোষ মজুমদার
ধরণঃ Autobiography
কাহিনী সংক্ষেপঃ "আমি বিশ্বাস করি যে আমার ধ্যান-ধারণা এবং চিন্তাধারা সেই সর্বশক্তিমানের দ্বারা পরিচালিত। সুতারাং ইহুদিদের বিরুদ্ধে দৃঢ়ভাবে দাঁড়ানোই হল ঈশ্বরের আপন হাতে শ্রেষ্ঠ মহান শিল্পকর্মের রক্ষা করার একমাত্র পথ।"-মাইন ক্যাম্ফ।
ছোটকাল হতেই 'হিটলার বনাম ইহুদী‘ কথাটি শুনেই আসছি। পড়ব পড়ব বলে পড়া হয়নি।
কয়েকদিন আগে পড়েছিলাম 'The Diary of Anne Frank' বইটি। যেখানে, অ্যানি ফ্রাঙ্কের পরিবার সহ আরো কয়েকটি পরিবার তার বাবার অফিসের লুকায়িত এক বাসায় প্রায় চার বছর অবস্থান করেছিল। ডাইরিটিতে অ্যানি ফ্রাঙ্ক তার দৈনন্দিন জীবনে ঘটে যাওয়া হাসি-দুঃখ-প্রেম-ঝগড়া সব লিখে রেখেছিল। মূল বিষয় হিটলার যে ইহুদিদের প্রতি যে নৃশংস গণহত্যা এবং অত্যাচার চালিয়ে ছিল তা ১২ বছর বয়সী অ্যানি ফ্রাঙ্কের ডায়েরিটিতে ফুটিয়ে উঠিয়েছিল। যখন পড়িতেছিলাম তখন হিটলারের প্রতি যে কতটা ঘৃণা এসেছিল, তা লিখে বুঝানো এই ছোট্ট পাঠকের অসাধ্য।
অ্যানি ফ্রাঙ্কের ডাইরিটা পড়ার পর পরই শুরু করলাম হিটলারের নিজের জীবনী নিয়ে লেখা 'মাইন ক্যাম্ফ' বাংলা অনুবাদ। যতই গভীরে গিয়েছি হিটলারের জ্ঞানের গভীরতা আর দুরদর্শী তা দেখে ততই মুদ্ধ হয়েছি।
হিটলার ছোটকাল হতেই রগচটা ছিল। নিজের কাছে যেটা ভাল মনে হতো সেটাকেই প্রধান্য দিত। বাবা ছিলেন সরকারি অবসর প্রাপ্ত কর্মচারী, যার পক্ষে তিনটা স্ত্রী ও ছেলেমেয়েদের ভরণপোষণ করা কষ্ট হয়ে উঠে। তাই ছোটকালেই জীবন নির্বাহের উদ্দেশ্যে ভিয়েনা পাড়ি জমান। সেখান হতে সে উপলব্ধি করতে পারে তার পিতৃভূমি জার্মানি অস্তিত্বহীনতায় পড়ে গেছে। ইহুদি, যাদের নিজস্ব কোন সভ্যতা নেই, তারা ব্যাবসায়িক এবং অন্যান্য সুত্রে জার্মানিতে এসে, তাদের প্রতি রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক ভাবে প্রভাব কাটাতে শুরু করে। যা হিটলারের মনে তীরে বিধ্বস্ত হওয়ার মতো আঘাত করেছিলো। সেই ছোটকাল হতেই ইহুদি বিদ্বেষী হয়ে উঠে। 'মাইন ক্যাম্ফ' বইটিতে ইহুদিদের কর্মকান্ড গুলো তুলে ধরার চেষ্টা করেছে।
হিটলার ১৯১৪ সালে জার্মানির হয়ে ১ম বিশ্বযুদ্ধে যোগদান করে এবং যুদ্ধকালীন সময়ে বিভিন্ন অবস্থা ফুটিয়ে তুলেন। যুদ্ধ পরবর্তীতে লেবার পার্টির সদস্য হিসেবে যোগদান করার পর পরই ঐ পার্টির প্রধান হয়ে নাম পরবর্তন করেন, যেটি বর্তমানে নাৎসী বাহিনী নামে পরিচিত। এ বইটিতে ২য় বিশ্বযুদ্ধের আগ পর্যন্ত বাস্তব চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
বইটিতে মূলত জার্মানির অস্তিত্ব রক্ষা, ইহুদি বিদ্বেষ আর হিটলারের বিশ্ব জয়ের চিন্তা-ভাবনার দিকটি ফুঠে উঠেছে।
হিটলারের রগচটা মনোভাব ছোটকাল হতে জীবনের শেষ মুহুর্ত অব্দি ছিল। শেষ মুহুর্তে এসেও আত্মসমর্পণ না করে নিজের মাথায় গুলি করে আত্মহত্যা করেছেন। ভাবা যায়...!
"আমি এমন অনেককে জানি যারা বইয়ের পর বই, পাতার পর পাতা পড়ে চলে, তবুও আমি তাদের পাঠক বলি না। হয়তো বা তারা অনেক পড়েছে। কিন্তু তাদের মস্তিষ্ক বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা কোথায়, যা তারা পড়ছে বা পড়েছে? এমনকি তাদের কোন বইটা প্রয়োজনীয় আর কোনটা অপ্রয়োজনীয় সেটুকু তফাৎ করার মতোও ক্ষমতা নেই। সুতরাং তাদের অবস্থা আগের টা পড়ে তো পরেরটা ভুলে; তারপর আবার সেটা পড়ে। আর নইলে সমস্ত ব্যাপারটাই অপ্রয়োজনীয় মাল বোঝাই জাহাজের মত ভারী করে। পড়াশোনা ব্যাপারটা শেষের জন্য নয়; বরং শেষের দিকে পা বাড়াবার প্রথম প্রদক্ষেপ মাত্র।একটা মূল উদ্দেশ্যই হলো প্রত্যেকের ভেতরে যে সুপ্ত প্রতিভা বা বিশ্বাস ঘুমিয়ে আছে তাকে জাগিয়ে তোলা।"
সতর্কীকরণঃ মানবহত্যা অবশ্যই মহাপাপ।
✪ দারবিশ
লেখকঃ লতিফুল ইসলাম শিভলী
ধরণঃ উপন্যাস
কাহিনী সংক্ষেপঃ এক সন্দেহ প্রবণ প্রেম কাহিনী নিয়ে উপন্যাসটি রচনা করা হয়েছে। গল্পের নায়িকা রোদেলা চাকরির জন্য আবেদন করার পর, এক জমিদারের ব্যাক্তিগত সহকারী হয়ে কাজ করল, তার প্রেমিক নিয়মিত সন্দেহ করতে থাকে এ নিয়ে।
গল্পটিতে অসাধারণ কোন কাহিনী নেই, তবে লেখকের শব্দচয়ন পাঠককে শেষ পৃষ্ঠা পর্যন্ত নিয়ে যেতে বাধ্য করবে।
✪ নকশী কাঁথার মাঠ
লেখকঃ জসীমউদ্দিন
ধরণঃ উপন্যাস
কাহিনী সংক্ষেপঃ এটি হলে মূলত কবিতার ছলে গল্প।
খুব অসাধারণ কোন গল্প না এটা, বাংলা সাহিত্যে বহুদিনধরে প্রচলিত প্রেম কাহিনীর মতো দুইটা গ্রাম নিয়ে রচিত, কবিতার ছন্দে , একটি গল্প। প্রথম কয়েক পৃষ্টা পড়ার পর, লেখকের শব্দ বিন্যাস আর ছন্দের খেলা দেখে প্রায় ব্হিবল হওয়ার মতো অবস্তা।
✪ পৃথিবী: সূর্যের তৃতীয় গ্রহ
লেখকঃ প্রদীপ দেব
ধরণঃ
কাহিনী সংক্ষেপঃ মহাবিস্ফোরণ, গ্যালাক্সি, বিগ-ব্যাং, মিল্কিওয়ে, সৌরজগৎ ইত্যাদির পরিচিতি হতে শুরু করে পৃথিবী নামক গ্রহের উৎপত্তি এবং এর আদিকালে এ গ্রহের অবস্তা কিরকম ছিল, কিভাবে প্রাণের বিস্তার-বিলুপ্ত, ঋতু পরির্বতন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ কেন, কিভাবে ইত্যাদি প্রায় ২৯টি বিষয় নিয়ে ১২০ পৃষ্টা বইয়ের মধ্যে তুলে ধরা হয়েছে।
✪ লজ্জা
লেখকঃ তসলিমা নাসরিন
ধরণঃ উপন্যাস
কাহিনী সংক্ষেপঃ নিষিদ্ধ কিছুর প্রতি মানুষের একটা আলাদা আকর্ষণ থাকে।
- ১ম প্রকাশ ১৯৯৩ সালে, এবং সেই বছরেই বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়।
- প্রায় ২৫টি ভাষায় অনূদিত
- ১৯৯২ সালে ভারতে বাবরি মসজিদে হামলা হওয়ার পর, ভারতে যে মুসলিম-হিন্দু দাঙ্গা হয়েছিল, তখন তার প্রভাব পরে এই বাংলাদেশেও। তার রচনামতে, বাংলাদেশে মুসলিম সম্প্রদায় সংখ্যালগু হিন্দুদের প্রতি একপাক্ষিক নির্যাতন করেছিল, তা সুধাময় দত্ত নামের এক হিন্দু পরিবার জীবনকাহিনী নিয়ে তখনকার চিত্রটি ফুটিয়ে তুলার চেষ্টা করেছে।
বইটির এত্তো নেগেটিভিটি আমাদের সমাজে ছড়িয়ে থাকার পরও, ব্যাক্তিগত রেটিং ৪/৫ দেওয়ার পেছনে আমার যথেষ্ট কারণ আছে।
✘বইটি নিষিদ্ধ হওয়ার কারণে লাইব্রেরিতে খোঁজ পেতে সমস্যা হতে পারে।
✪ আমার দেখা নয়াচীন
লেখকঃ শেখ মুজিবুর রহমান
ধরণঃ ভ্রমণ কাহিনী
কাহিনী সংক্ষেপঃ পড়ার পর মনে হচ্ছে, 'অনেকদিন ধরে একটা মরুতৃষ্ণা ছিল, যেটি বইটি পড়ার পর মিটে গেছে'।
"আমি কোন লেখক নই, অনুভব করতে পারি মাত্র, লেখার ভিতর দিয়ে প্রকাশ করার মতো ক্ষমতা খোদা আমাকে দেন নাই"। এভাবেই কোন অনুভূতি প্রকাশ করার আগে পাঠকদের কাছ হতে ক্ষমা চেয়ে নেন। তাঁর লেখা গতানুগতিক লেখকদের মতো নই, অথচ, তাঁর লেখার মধ্যে নিজস্ব একটা ধরন(স্টাইল) আছে, সহজ-সাবলীল, পড়তে ভালো লাগে।
এর আগে 'অসমাপ্ত আত্মজীবনী' বইটি পড়েছিলাম, ভালোই লেগেছিল, তবে এটাই বেস্ট মনে হচ্ছে।
১৯৪৯ সালে কমিউনিস্ট সরকার 'মাও সে তুং' এর নেতৃত্বে পুনর্গঠিত হয় চীন, যা 'নয়া চীন' নামে অভিহিত। ১৯৫২ সালে চীনের পিকিংয়ে অনুষ্ঠিত, শান্তি সম্মেলনে যোগ দিতে পাকিস্তান প্রতিনিধিদলের সদস্য হয়ে যোগ দেন শেখ মুজিব। সদ্য প্রতিষ্ঠিত হওয়া চীনে, ভ্রমণ কাহিনী বলতে গিয়ে, সমাজকে কিভাবে দেখেছেন তা বলে গেছেন তাঁর সহজ সাবলীল ভাষায়।
মহান নেতা মাও সে তুং এর নেতৃত্বে বিপ্লবের মধ্য দিয়ে সাম্রাজ্যবাদীদের দালাল চিয়াং কাইশেকের পতন হয়। বিপ্লব পরবর্তী সময়ে নয়াচীনে বিরাট পরিবর্তন আসে। ধনী-গরিব, মালিক-শ্রমিকের মধ্যে ব্যাবধনলান কমে আসে। নয়াচীন সরকার প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর, 'লাঙ্গল যার জমি তার' প্রথা প্রবতর্ন করে, বড় বড় জমিদারের জমি বাজেয়াপ্ত করে কৃষকদের বণ্টন করা হল।
শেখ মুজিব লেখেন,"নয়া চীনে এক খন্ড জমি দেখলাম না, যা অনাবাদী অবস্থায় পড়ে আছে। রেললাইনের পাশে যে গর্ত গুলো পড়ে থাকে সেগুলোতেও ফসল করা হয়েছে। যদি কোন জমি ইচ্ছাকৃত পড়ে৷ থাকে, তাহলে সরকার কঠোর শাস্তি দেয়।"
জনমত গঠন অথবা কঠোর আইন প্রণয়নের মধ্য দিয়ে বেকার সমস্যা, ভিক্ষাবৃত্তি, ডাকাতি, আফিম নেশামুক্তি, বেশ্যাবৃত্তি সব নির্মূল করতে সক্ষম হয়েছে।
সদ্য প্রতিষ্ঠিত হওয়া একটি দেশের জনগণেরর চিন্তাভাবনা, শিক্ষাব্যবস্থা, সরকারের প্রতি আনুগত্যতা, শিল্প কারখানাও বাজার ব্যাবস্থা, দুর্নীতি ইত্যাদি প্রতিটি বিষয় তীক্ষ্ণ ভাবে পর্যবেক্ষণ করে পাঠকদের কাছে তুলে ধরেন।
হয়তো এরই মাঝে নিহিত ছিল নতুন দেশ ভাবনা।
✪ সাম্যবাদী
লেখকঃ কাজী নজরুল ইসলাম
ধরণঃ কাব্যগ্রন্থ
কাহিনী সংক্ষেপঃ সাম্যবাদ বলতে সাধারণত বুঝায়, ধনী-গরিব, মালিক-শ্রমিক, নারী-পুরুষ, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, দেশ ইত্যাদির যেখানে কোন ভেদাভেদ নাই।
'বাঘে-মহিষে এক ঘাটে জল খায়'- প্রবাদটি শুনেই এসেছি, কিন্তু বাস্তবে এমন খুব কমই জেনেছি। কিন্তু কবির, 'মানুষ, চোর, পাপী, নারী ইত্যাদি প্রায় ১১টি কবিতা' নিয়ে গঠিত এই সাম্যবাদী কাব্যগ্রন্থে - কুরআন,বেদ,বাইবেল ইত্যাদি, মসজিদ, মন্দির, গির্জা ইত্যাদি সব কিছুকেই একই লাইনে দাঁড় করিয়ে, সাম্যের গান গেয়েছেন এবং গাওয়ার আহ্বান করেছেন।
✪ রুপসী বাংলা
লেখকঃ জীবনানন্দ দাশ
ধরণঃ কাব্যগ্রন্থ
কাহিনী সংক্ষেপঃ 'বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি, তাই আমি পৃথিবীর রুপ খুঁজিতে যায় না আর'
এই একটা লাইন'ই যথেষ্ট -সম্পূর্ণ বইটা বিশেষায়িত করার জন্য।
জীবনানন্দের কবিতাগুলো ব্যাক্তগতভাবে কোন কিছুইতেই লিখে/বলে সম্পূর্ণ প্রকাশ করতে পারি না...। তাই কবিতাগুলো শুধুই অনুভব করি, আর নিরব উল্লাসে মেতে উঠি।
✪ রাখালী
লেখকঃ জসীমউদ্দিন
ধরণঃ কাব্যগ্রন্থ
কাহিনী সংক্ষেপঃ কবি এবং মানুষরা যেখানে আধুনিকতার স্রোতে গা ভাসাচ্ছে, সেখানে, স্রোতের বিপরীতে গিয়ে গ্রামের ভিটেমাটি, নদ-নালা, কৃষক-জেলেদের দুঃখ কষ্টা অনুভব করে, তা পল্লীকবি খ্যাত জসীমউদ্দিনের রচনায় খুবই সুচারুরূপে ফুটিয়ে তুলা হয়েছে। রাখালী কাব্যগ্রন্থে ১৯টি কবিতার মধ্যে 'কবর' কবিতাটি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে, এর ভাবার্থ এবং দুঃখ-কষ্ট গুলোকে জীবন্ত করে তুলার কারণে।
✪ ফেরা
লেখকঃ তসলিমা নাসরিন
ধরণঃ স্মৃতিচারণ মূলক উপন্যাস
কাহিনী সংক্ষেপঃ দীর্ঘ ৩০ বছর পর জন্মভূমিতে ফিরে এসে, ফেলে আসা বন্ধু-বান্ধব, খেলাধূলা, লুকোচুরি ইত্যাদি খোঁজতে গিয়ে কল্যাণী, গল্পের মূল চরিত্র, তাঁর ছেলে দীপনকে সাথে নিয়ে যে স্মৃতিচারণ করেছে, তা আমার মতো যারা স্মৃতিকে আঁকড়ে ধরতে চায় তাদের সবচেয়ে পছন্দের একটা বই হবে।
পড়ার সময় অনেকগুলো ভেবে চিন্তে রেখেছিলাম, একটা ভালো রিভিউ দিব বলে,কিন্তু...!
বইটিতে অসাধারণ কোন কাহিনী নেই, কল্যাণী তাঁর ফেলে আসা দিনগুলোকেই বারবার তুলে ধরতে গিয়ে কয়েক মুঠো মাটি ব্যাগের ভেতর রেখে দেওয়া, ব্রহ্মপুত্র নদী নিয়ে ছেলের সাথে গল্প করা, টিউবওয়েলের পানি খেতে চাওয়া, গাছকে জড়িয়ে ধরে কান্না করা, শৈশবের বান্ধবীকে জড়িয়ে ধরার ইচ্ছে সবগুলো ছোট্ট ছোট্ট বিষয়ই অসাধারণ ভাবে ফুটিয়ে তুলেছে।
✪ রুপালী দ্বীপ
লেখকঃ হুমায়ুন আহমেদ
ধরণঃ উপন্যাস
কাহিনী সংক্ষেপঃ হুমায়ূন আহমেদ' এ মানুষটা, পাঠকের মনকে কেমনে এভাবে আকৃষ্ট করতে পারে! আমি বিশ্বাস করি এবং অতি-বিশ্বাস করি যে, বাংলা সাহিত্যের প্রতিটা পাঠকই একবার না একবার এই মানুষটার কথার(লেখনীর) প্রেমে পড়েছে। আমি বারবার তাঁর লেখার গুণাবলি দেখে অবাক হয়। যখন যে বইটি পড়ি তখন সে চরিত্রের সাথে মিশে যায়। যেমন: 'হিমু','মিসির আলী','শুভ্র' একেকটা একেকে ধরনের চরিত্র, এবং ভিন্ন ভিন্ন বয়সের। কিন্তু, এ মানুষটা যে কেমনে সকল চরিত্রের বৈশিষ্ট্য গুলো তাদের মতো করেই ফুটিয়ে তুলতে পারে।
এইতো ২০২১ সাল শেষ হতে যাচ্ছে, এ পর্যন্ত অনেকগুলো ফিকশনাল গল্প-উপন্যাস পড়া হয়েছে। ধরে নিয়েছিলাম, সেল্ফে যে গুলো আছে সেগুলো ছাড়া আর কোন ফিকশনাল বই পড়ব না। কিন্তু, মন খারাপ করে যখন রিডার্স ব্লক চলে, তখন স্বাভাবিক আসতে হয় এ হুমায়ূন আহমেদকে পড়ে।
যাইহোক, অনেকদিন পরেই 'রুপালী দ্বীপ' বইটি পড়েই ভালোই লাগল।
বইটি 'শুভ্র' সিরিজের ৩য় এবং 'দারুচিনি দ্বীপ' সিরিজের ২য় বই।
আমার পড়া শুভ্র সিরিজের প্রথম বই। বইটিতে কয়েকজন বন্ধু-বান্ধব মিলে চিটাগং-কক্সবাজার-টেকনাফ পাড়ি দিয়ে গল্পের দারুচিনি দ্বীপের উদ্দেশ্যে ঢাকা হতে ট্রেনে রওনা দেওয়ার সময় কোন কারণ ছাড়াই মুনা অয়বের পিছু পিছু ট্রেনে উঠে পড়ে। জরী নামের এক মেয়েও বিয়ের আসর হতে পালিয়ে এসে তাদের সাথে যোগ দেয়। পরে, চট্টগ্রাম পৌঁছালে পুলিশ তাদের সবাইকে এরেস্ট করে জেল বন্দী করে। এখানে, শুভ্র এর বাবা ছেলের ঢ়াতে কোন সমস্যা না হয়, সেজন্য একজন মানুষ তাদের পিছনে পিছনে পাঠান।
পরবর্তীতে তারা টেকনাফ পৌঁছালে, নাফ নদীর সৌন্দর্য এবং জোৎস্নার রাতে তাদের আনন্দ-রাগ-অভিমান ইত্যাদির এক পর্যায়ে যখন অয়ন(বল্টু) চলে আসতে চাইছিল, তখন মুনার অব্যাক্ত রোমাঞ্চকর কথা সবগুলোই দেয়ালে সাজিয়ে রাখার মতো।
বাবার জন্মদিন উপলক্ষে উপহার দেওয়া বইয়ের নোট..
"বাবা
জন্মদিনের শুভেচ্ছা,
আমার খুব ইচ্ছে হয়, আমি তোমার মতো হয়।
শুভ্র"
তাছাড়া, বইটিতে হাসির ছলে চরম কিছু সত্যের কথা বলা হয়েছে, যা মানবের ব্যাক্তিগত ভাবে ভালো কিছু প্রভাবিত করবে।
পড়ে দেখুন...
✪ দ্যা আর্ট অব ওয়ার
ধরণঃ যুদ্ধ কৌশল ও পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ক।
লেখকঃ সান জু
অনুবাদকঃ সাদমান ইব্রাহিম
কাহিনী সংক্ষেপঃ শিরোনাম নামটি দেখেই আগ্রহ নিয়ে পড়া শুরু করলাম তেরোটা অধ্যায়ে বিভক্ত সাদমান ইব্রাহিমের অনুবাদটি।
মূল লেখক সান জু
আজ হতে প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে লেখা বইটি নিঃসন্দেহে একজন দলের নেতা, যুদ্ধের সেনাপতি, একটি ব্যবসায়ের পরিচালক ব্যাক্তিবর্গদের পড়া এবং অনুশীলন করা উচিৎ বলে মনে করি।
একটি ব্যবসায়,দল,খেলা,যুদ্ধের ময়দানে মূল লক্ষ পৌঁছানোর জন্য অসাধারণ কতগুলো দিকনির্দেশনা রয়েছে। অনেকেই হয়তো তাদের মূল লক্ষে পৌছানোর জন্য নিজের মত করে দিক-নির্দেশনা দিয়েই যাচ্ছে, হতেও পারে নিজের অজান্তেই এর বেশির ভাগই আড়াই হাজার বছর আগে লেখা এ বইটির আলোচনার সাথে মিলে যেথে পারে।
বইয়ের কতগুলো লাইন..
☞ যুদ্ধক্ষেত্রে সেরা কারিশমা হচ্ছে, যুদ্ধ না করে শত্রুকে পরাস্ত করা।
☞ যুদ্ধে অসাধারণ ওস্তাদি হচ্ছে আপনি যখন বিনা বাধায় শত্রুর প্রতিরুধ বূহ্য ভেঙে ফেলেন।
⇨মার্কেটিং পলিসিঃ সেরা মার্কেটিং ওটাই যখন ক্রেতা টেরই পায় না যে আপনি তার কাছে কোন কিছু বিক্রয় করছেন।
✪ গাভী বৃত্তান্ত
লেখকঃ আহমদ ছফা
ধরণঃ ব্যাঙ্গার্থক উপন্যাস
কাহিনী সংক্ষেপঃ এ নিয়ে আহমদ ছফা স্যারের চতুর্থ তম বই গলাধঃকরণ করলাম।
তাঁর বইয়ে প্রতিবারের মত সমাজ রাষ্ট্র ইত্যাদি কোন বিষয় অবশ্যই থাকবেই।
গাভী বিত্তান্ত হল একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্থরীণ বিষয়াবলি এবং রাজনীতি নিয়ে।
উপন্যাসের মূল চরিত্র আবু জুনায়েদ ভাগ্যক্রমে উপাচার্য পদে আসীন হওয়ার সর্বস্তরের লোক বিস্মিত হয়ে পড়ে। যার নেই কোন ভাল মানুষের সাথে পরিচয়! নেই বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন দলের সাথে সম্পৃক্ত! যায়হোক, উপাচার্য যেহেতু হয়ে গেছেই, এক একজন নিজেদোর মত করে কৃতিত্ব নিতে চাচ্ছিল।
এরই মধ্যে আবু জুনায়েদের স্ত্রী নুরুন্নাহার বানু রীতিমতো পাড়াপড়শিকে তাঁর জন্যই আবু জুনায়েদের এমন পদে আসীন হওয়া, তাঁর বাবার খরচেই জুনায়েদ লেখাপড়া করেছে ইত্যাদি ইত্যাদি কথা বলতেই থাকত। উপাচার্যের স্ত্রী হিসেবে একটু ক্ষমতাতো দেখাতে হবে। তাই বাড়ির দারোয়ান,চাকর,মালিদের সাথে উচ্চস্বরে এবং তুমি করে কথা বলতো। তার স্বামী মেয়ে সবাইকে তার কথায় উঠতে-বসতে হতো।
অন্যদিকে আবু জুনায়েদেরও বিভিন্ন পরিবর্তন আসতে শুরি করল। যেমন ভালো পোশাক, কারো সাথে কথা বলা কিংবা কোন কিছু করার আগে একটু শালীনতা বজায় রাখা ইত্যাদি।
এরইমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ঠিকাদারের (পরে জানতে পারে স্ত্রীর চাচা) বাড়িতে দাওয়াত পাওয়ার পর, ওখানে যাবে কিনা সংকোচ (কারণ ঠিকাদারের বাড়িতে উপাচার্য!)। পরবর্তী তে যাওয়ার পর ঠিকাদারের সাথে সখ্য গড়ে উঠে উপাচার্যের এবং তার একটা গাভী পালনের ইচ্ছে পেশ করলে, পরবর্তীদিনে গোয়াল ঘর সহ গাভীর ব্যাবস্থা করে দেন।
গাভীকে নিয়ে অনেক অনেক ভাল মন্তব্য করতে লাগল। কিন্তু বিপরীত দলের অনেকেই এটা নিয়ে কুৎসারটনা করলে, এর বিপরীতে আবু জুনায়েদকে নিয়ে আরকেটা ভালো মন্তব্য লিখে ছাপানো হল। আবু জুনায়েদ গাভীর প্রতি খুব বেশি আকৃষ্ট হওয়া, মেয়ের, মালী,চকারদের অবাধ্যতা ইত্যাদি নুরুন্নাহার বানুকে খুবই জ্বালাতো। এরপর হঠাৎ একদিন দেখে গাভীটি বিষ খেয়ে....।
বইটি পড়ুন, একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলো খুব ভালো ভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
⇨ বইয়ের কাহিনী সংক্ষেপ গুলো আরও ভালোভাবে এবং বিস্তারিত লেখার ইচ্ছে ছিল, কিন্তু সময়ের অভাবে, ভালোভাবে ফুটিয়ে তুলতে সক্ষম হয় নি।
আগেই বলেছিলাম, ২০২১ সালের, আমার পড়া পছন্দের বই গুলো নিয়েই তালিকা করব, সেহেতু প্রতিটা বইয়ের পজিটিভ দিক গুলোকেই বেশ গুরুত্ব দিয়ে লেখা হয়েছে।
#হ্যাপি_রিডিং
0 Comments