আমার দেখা নয়াচীন

লেখকঃ শেখ মুজিবুর রহমান
ধরনঃ ভ্রমণকাহিনী
ব্যাক্তিগত রেটিংঃ 4.5/5
প্রকাশকঃ বাংলা একাডেমি


পড়ার পর মনে হচ্ছে, 'অনেকদিন ধরে একটা মরুতৃষ্ণা ছিল বুকে, যেটি বইটি পড়ার পর মিটে গেছে'
"আমি কোন লেখক নই, অনুভব করতে পারি মাত্র, লেখার ভিতর দিয়ে প্রকাশ করার মতো ক্ষমতা খোদা আমাকে দেন নাই"। এভাবেই কোন অনুভূতি প্রকাশ করার আগে পাঠকদের কাছ হতে ক্ষমা চেয়ে নেন। তাঁর লেখা গতানুগতিক লেখকদের মতো নই, অথচ, তাঁর লেখার মধ্যে নিজস্ব একটা ধরন(স্টাইল) আছে, সহজ-সাবলীল, পড়তে ভালো লাগে।

এর আগে 'অসমাপ্ত আত্মজীবনী' বইটি পড়েছিলাম, ভালোই লেগেছিল, তবে এটাই বেস্ট মনে হচ্ছে।

১৯৪৯ সালে কমিউনিস্ট সরকার 'মাও সে তুং' এর নেতৃত্বে পুনর্গঠিত হয় চীন, যা 'নয়া চীন' নামে অভিহিত। ১৯৫২ সালে চীনের পিকিংয়ে অনুষ্ঠিত, শান্তি সম্মেলনে যোগ দিতে পাকিস্তান প্রতিনিধিদলের সদস্য হয়ে যোগ দেন শেখ মুজিব। সদ্য প্রতিষ্ঠিত হওয়া চীনে, ভ্রমণ কাহিনী বলতে গিয়ে, নবসমাজকে কিভাবে দেখেছেন তা বলে গেছেন তাঁর সহজ প্রাঞ্জল্য ভাষায়।
মহান নেতা মাও সে তুং এর নেতৃত্বে বিপ্লবের মধ্য দিয়ে সাম্রাজ্যবাদীদের দালাল চিয়াং কাইশেকের পতন হয়। বিপ্লব পরবর্তী সময়ে নয়াচীনে বিরাট পরিবর্তন আসে। ধনী-গরিব, মালিক-শ্রমিকের মধ্যে ব্যাবধান কমে আসে।
নয়াচীন সরকার প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর, 'লাঙ্গল যার জমি তার' প্রথা প্রবতর্ন করে, বড় বড় জমিদারের জমি বাজেয়াপ্ত করে কৃষকদের বণ্টন করা হল।
শেখ মুজিব লেখেন,"নয়া চীনে এক খন্ড জমি দেখলাম না, যা অনাবাদী অবস্থায় পড়ে আছে। রেললাইনের পাশে যে গর্ত গুলো পড়ে থাকে সেগুলোতেও ফসল করা হয়েছে। যদি কোন জমি ইচ্ছাকৃত পড়ে৷ থাকে, তাহলে সরকার কঠোর শাস্তি দেয়।"

জনমত গঠন অথবা কঠোর আইন প্রণয়নের মধ্য দিয়ে বেকার সমস্যা, ভিক্ষাবৃত্তি, ডাকাতি, আফিম নেশামুক্তি, বেশ্যাবৃত্তি সব নির্মূল করতে সক্ষম হয়েছে।
সদ্য প্রতিষ্ঠিত হওয়া একটি দেশের জনগণেরর চিন্তাভাবনা, শিক্ষাব্যবস্থা, সরকারের প্রতি আনুগত্যতা, শিল্প কারখানাও বাজার ব্যাবস্থা, দুর্নীতি ইত্যাদি প্রতিটি বিষয় তীক্ষ্ণ ভাবে পর্যবেক্ষণ করেন, এবং তা পাঠকদের কাছে তুলে ধরেন।
হয়তো এরই মাঝে নিহিত ছিল নতুন দেশ ভাবনা।
বর্তমানে শেখ মুজিবের আদর্শকে বুকে ধারণ করি বলে গলা পাটানো(চিৎকার দেওয়া) চাটুকরদের, প্রত্যেকের পড়া উচিৎ
Reactions

Post a Comment

0 Comments